ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, পোশাক দেখে রাজনীতির আন্দোলন চেনা যায়- আমি তো কোনদিনও এটা ভাবিনি। তার অভিমত আমি কি পোশাক পরে আছি, তাই দেখে আপনি বলে দিতে পারেন আমি কে?
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতার যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়া এক প্রতিবাদী মিছিলে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
গত রবিবার ঝাড়খণ্ডের দমকায় এক নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত থেকে দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন "যে লোকগুলি অগ্নিসংযোগ ঘটাচ্ছে, তাদের টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেছে। যে পোশাক তারা পরে আছে, তাই দেখেই তাদের চিহ্নিত করা যায়।"
এদিন সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, "....এটা একটা কথা? পোশাক দেখে নাকি চেনা যায় কারা আন্দোলন করছে? আমি তো একটা পোশাক পরে আছি- দেখুন তো আমাকে চিনতে পারেন কিনা-আমার পোশাকটা কি? এটা কি খুব খারাপ পোশাক? মমতার পাশে দাঁড়ানো কয়েকজনের পোশাক দেখিয়ে তিনি বলেন, "আমার এই বোনটি পোশাক পরে আছে এটা কি খারাপ? গৌতম ঘোষ আরেকটি পোশাক পরে আছেন সেটা খারাপ, না ভালো? অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে কাছে টেনে নিয়ে মমতা বলেন, ও যে পোশাকটি পরে আছে এটা কি ভালো, না খারাপ? নাকি মাথায় টুপি পরা দেখলে মনে হয় ওরাই শুধু এই পোশাক পরে আর কেউ পরে না।"
মমতা বলেন, ''পোশাক যার-যার নিজের মতো। খাবার যার-যার নিজের মত। কবে তো আমায় বলবে তুমি সাদা চটি পরছো কেন? তোমাকে একটা গেরুয়া চটি বানিয়ে দিচ্ছি ওটা পর। পোশাক দেখে নাকি রাজনীতির আন্দোলন চেনা যায় আমি তো কোনদিনও এটা ভাবিনি।"
মমতার হুঁশিয়ারি, "আগুন যখন ঘরে লাগে, সেই আগুনের আঁচ রামের গায়ে লাগবে রহিমের গায়ে লাগবে। বন্যার পানি যদি ছুটে আসে তবে আমিও বাঁচবো না, আপনিও বাঁচবেন না।"
মিছিল থেকে ক্যাব বাতিলের দাবি জানিয়ে মমতা বলেন, "আমরা এনআরসি মানছি না, মানবো না। ক্যাব মানছি না, মানবো না।" মিছিল থেকে শপথ নেওয়া হয়, "আমরা সবাই নাগরিক। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে আমাদের জীবন ও আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেবো না। নিশ্চিন্তে থাকবো, শান্তিতে থাকবো। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না, দেব না। দেশ ভাগ হতে দিচ্ছি না, দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভারত চাই।"
বিজেপির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, "একটা নির্বাচনে জিতে ভাবছে আমরা দেশটাকে দখল করে নিলাম। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে কোন কোন বিল পাস করানো যায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে মানুষের সমর্থন যেখানে থাকে না, সেটা কিন্তু কার্যকরী হয় না। সংবিধান মেনেই সবকিছু করতে হয়। কিন্তু ওরা সংবিধান মানেনি।" তার অভিযোগ "সংসদে যখন বিলটি পাস করানো হয়, তখন কাউকে জানতে দেওয়া হয়নি এটি কখন পাস করানো হবে। অনেক সাংসদ সময় মত পৌঁছতে পারেননি। এ রকম একটি স্পর্শকাতর বিল দুপুরবেলায় এনে মধ্য রাতে পাস করানো হয়েছে। গায়ের জোরে সব কিছু হয় না। ঔদ্ধত্যের জেরে সবকিছু হয় না। ক্ষমতার জোরেও সব কিছু হয় না।"
স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনাকে ছোট্ট ঘটনা বলে মমতা বলেন, "দুটি ছোট ছোট ঘটনা ঘটেছে আর সব ট্রেন তিনদিন ধরে বন্ধ করে দিয়েছে। দূরপাল্লার সব ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষ কত সমস্যার মধ্যে আছে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করবো ট্রেন পরিষেবা চালু করতে। দুটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো রেলের সীমানার মধ্যে পড়ে। আমাদের সীমানার মধ্যে পড়ে না। তোমার পুলিশ যদি প্রটেকশন দিতে না পারে, এটা তোমার দায়িত্ব। এটা আমার দায়িত্ব নয়।"
যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয় এই মিছিল। পরে গোলপার্ক, গড়িয়াহাট, রাসবিহারী এভিনিউ, কালীঘাট হাজরা মোড় হয়ে মিছিল শেষ হয় দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবুর বাজারে। মমতার সাথে মিছিলে পা মেলান তৃণমূলের দুই সংসদ সদস্য অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহান, পরিচালক গৌতম ঘোষ, বিধায়ক ফুটবলার দিপেন্দু বিশ্বাস, অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীসহ দলের নেতা-নেত্রীরা।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব