রাত পোহালেই শনিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট। এই দফায় রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে ভোটগ্রহণ নেওয়া হবে। মাওবাদী অধ্যুষিত এই আসনগুলোর রাজ্যের জঙ্গলমহল বলে পরিচিত পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত।
ভোট শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তার আগে শুক্রবার সকাল থেকে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারগুলোতে শুরু হয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। ভোটকর্মীরাও বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের তরফেও কোনো কমতি রাখা হয়নি। ৩০টি কেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাথেই থাকছে রাজ্য পুলিশের সদস্যরাও। থাকছে কুইক রেসপন্স টিম। নজরদারি চলবে ড্রোনেও।
কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট শুরু হবে। কমিশনের পক্ষে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আসা প্রতিটি ভোটার এবং ভোটের কাজে যুক্ত প্রতিটি কর্মীদের মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের মুখে প্রত্যেককে থার্মাল স্ক্রিনিং করাতে হবে। প্রত্যেককেই সাথে রাখতে হবে স্যানিটাইজার ও বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব।
প্রথম দফায় ১৯১ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে ২১ জন নারী প্রার্থী, ১৭০ জন পুরুষ। ভোটারের সংখ্যা ৭৩,৮০,৯৪২ জন।
নজরকাড়া প্রার্থীরা হলেন-মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়া, বিজেপির সমিত দাস, বাঘমুন্ডি কেন্দ্রে বর্তমান বিধায়ক কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো, রানীবাঁধ কেন্দ্রে রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী সিপিআইএম প্রার্র্থী দেবলীনা হেমব্রম।
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকারে আসতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির লক্ষ্য তৃণমূলকে উৎখাত করে বাংলায় পদ্ম ফুল ফোটানো। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয় পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেখানে তৃণমূলের জয় ছিল ২২টি আসনে। এরপর থেকেই রাজ্যটিতে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিধানসভার নির্বাচনে তাদের লক্ষ্য ২০০ আসনে জয়লাভ। আর সেই লক্ষ্যেই তারা অলআউট ঝাঁপাচ্ছে।
অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে আসন সমঝোতা করে লড়াই করছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। এর মধ্যে ১৩৭টি আসনে বামফ্রন্ট, ৯১ আসনে কংগ্রেস ও ২৮ আসনে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রার্থীরা লড়াই করছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত একাধিক আসনে জোটের প্রার্থীরা শক্ত পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে তৃণমূল ও বিজেপিকে।
পশ্চিমবঙ্গের সাথেই আসামেও শনিবার প্রথম দফার ভোট শুরু হচ্ছে। রাজ্যটির ১২৬টি বিধানসভার আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। এই রাজ্যটিতে মোট তিন দফায় ভোট গ্রহণ হবে।
প্রথম দফায় ২৬৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ১১৫৩৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৮১,০৯৮১৫ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৪০,৭৭,২১০, নারী ভোটার ৪০,৩২,৪৮১ জন।
আসামে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকারে আসতে মরিয়া বিজেপি। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের স্বচ্ছ ভাবমূর্র্তিকে সামনে রেখেই ভোটারদের মন পেতে চাইছে তারা। ২০১৬ সালে কংগ্রেসকে উৎখাত করে প্রথমবারের মতো সেখানে সরকার গড়ে বিজেপি এবং উত্তরপূর্ব ভারতের কোনো রাজ্যে সেটাই ছিল তাদের প্রথম সরকার গঠন। এবারের নির্বাচনে তাদের লক্ষ্য আসামে (মোট আসন ১২৬) ১০০টিরও বেশি আসনে জয়লাভ করা।
এবারের নির্বাচনে এই রাজ্যটির ১২৬ আসনে ‘অসম গণ পরিষদ’ (অগপ) এবং ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল (ইউপিপিএল) এর সাথে আসন সমঝোতা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। বিজেপি লড়ছে ৯২টি আসনে। অন্যদিকে, অগপ ২৬ আসনে ও ইউপিপিএল ৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপির প্রতিপক্ষ কংগ্রেস-এআইইউডিএফ জোটের প্রার্থীরা। গণনা আগামী ২ মে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই