চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসজুড়ে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘খেলা হবে’ স্লোগানই হয়ে উঠেছিল ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান হাতিয়ার। প্রচারণায় বেরিয়ে মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে বাম পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন দলের প্রধান মমতা ব্যানার্জি। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে, ভেঙে গিয়েছিল তার পা। এরপর ব্যান্ডেজ করা ভাঙা পা নিয়েই তাকে প্রচারণায় দেখা যায়। তখন তিনি বলেছিলে, ‘ভাঙা পায়েই খেলা হবে।’ যদিও বিরোধীরা তার ভাঙা পা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি, তাদের অভিযোগ ছিল সহানুভূতি কুড়ানোর জন্যই মমতা এই নাটক করছেন। পরে বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। আর ক্ষমতায় এসেই প্রতিবছর ১৬ আগস্ট রাজ্যে ‘খেলা হবে’ দিবস পালনের ঘোষণা দেন মমতা।
সেইমতো সোমবার ১৬ আগস্ট রাজ্যজুড়েই এই দিনটি পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ প্রতিটি জায়গাতেই ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে দলের সাংসদ-বিধায়ক-নেতা-কর্মীরা। ১৯৮০ সালের এই দিনে কলকাতায় একটি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন সময়ে পদদলিত হয়ে নিহত ১৬ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশপাশি খেলাধুলাকে তুলে ধরাটাই এর উদ্দেশ্য।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরাতেও ‘খেলা হবে’ দিবস পালন করেছে তৃণমূল। বাংলা জয়ের পর এবার তাদের লক্ষ্য ২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সেখানে তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল। যদিও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এই দিবস পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
কয়েকদিন আগেই ‘খেলা হবে’ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন ‘খেলা হবে দিবসটি যেন মানুষের মনে লেগে থাকে। খেলাধুলার জগতে এই স্লোগান আলোড়ন সৃষ্টি করবে।’
খেলা হবে দিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যজুড়ে এক লাখ ক্লাবকে ফুটবলও উপহার দেওয়া হয় এদিন।
তবে ‘খেলা হবে’ দিবসের বিরোধিতা করে বিজেপি বলেছে এই স্লোগান পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের ওপর অত্যাচারের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাছাড়া ১৯৪৬ সালে এই দিনেই মুসলিম লিগ তাদের ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’ এবং ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ শুরু করেছিল, আর এই দিনেই তৃণমূল খেলা হবে দিবস পালন করছে।
উল্টে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজ্যটির বিরোধী রাজনৈতিক দল। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ভুয়া টিকাকরণ শিবির, নারী নিগ্রহ, বিরোধীদের ওপর শাসকদলের অত্যাচারসহ একাধিক ইস্যুতে এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এদিন কলকাতার রানি রাসমণি রোডে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি নেতারা। সৌমিত্র খাঁ, শীলভদ্র দত্ত’এর মতো নেতাদের আটক করে পুলিশ। পরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ থেকে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতাদের টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তেলা হয় বলে অভিযোগ। বাদ যায়নি বিজেপির নারী সদস্যরাও। কলকাতার পাশাপাশি প্রতিটি জেলাতেও ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও’ কর্মসূচি গ্রহণ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে বিজেপি নেতাকর্মীরা।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ