কোভিড-১৯ এর মতো মহামারি, নড়বড়ে অর্থনীতি, প্রতিবেশি রাষ্ট্র চীনের সাথে সীমান্ত সমস্য সর্বোপরি গত প্রায় এক বছর ধরে দিল্লির বুকে কৃষক আন্দোলন- এত কিছুর মধ্যেও মোদির জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতার শীর্ষে রয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
‘ইন্ডিয়া টুডে-সি ভোটার’ এর যৌথ উদ্যোগে করা ‘মুড অব দ্য নেশন’ (এমওটিএন)-এর একটি জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। দেশজুড়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতি বছরের দুইবার- জানুয়ারী ও আগষ্ট মাসে এই তথ্য সামনে আনে ইন্ডিয়া টুডে। আগামী মাসেই উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে জরিপে উঠে আসা কিছু তথ্য যেমন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কাছে কিছুটা স্বস্তির, তেমনি কিছু তথ্য অস্বস্তির কারণ হিসাবেও দেখা দিতে পারে।
জরিপে অংশ নেওয়া শতকরা ৫৮ শতাংশ মানুষ মোদি সরকারের কাজে অনেক বেশি সন্তুষ্ট বা মোটামুটি সন্তুষ্ট। যেখানে ২৬ শতাংশ মানুষ তার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষের অভিমত যে কোন কাজে মোদির ব্যক্তিগত দক্ষতা অসাধারণ/ভাল বলে মনে করেন। যদিও গত ২০২০ সালের আগষ্টে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় করা এমওটিএন’এর একটি জরিপে মোদির কাজকে সঠিক বলে মনে করেছিল ৭৮ শতাংশ মানুষ।
ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদির ধারে কাছে কেউ নেই। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি সাংসদ রাহুল গান্ধী রয়েছেন ৪৬ শতাংশ পিছনে। জরিপে অংশ নেওয়া ৫২.৫ শতাংশ মানুষ যেখানে মোদিকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান, যেখানে মাত্র ৬.৮ শতাংশ মানুষ এই পদে রাহুলকে চায়। অন্যদের মধ্যে ৫.৭ শতাংশ মানুষ যোগী আদিত্যনাথ, ৩.৫ শতাংশ মানুষ অমিত শাহ, ৩.৩ শতাংশ মানুষ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, ৩.১ শতাংশ মানুষ অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ২.৬ শতাংশ মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান।
ভারতের পাঁচ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি বলে জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাজে সন্তুষ্ট বলে মনে করেন। অন্যদিকে মণিপুরে ৭৩ শতাংশ মানুষ, গোয়ায় ৬৭ শতাংশ মানুষ, উত্তরাখন্ডে ৫৯ শতাংশ মানুষ এবং পাঞ্জাবে ৩৭ শতাংশ মানুষ মোদির কাজ-কর্মে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গোটা দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শীর্ষে আছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ওড়িশার ৭১.১ শতাংশ মানুষ তার কাজে সন্তুষ্ট। দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গের মখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, তার কাজে সন্তুষ্ট ৬৯.৯ শতাং মানুষ, তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ুর এম.কে.স্টালিন, তার কাজে সন্তুষ্ট ৬৭.৫ শতাংশ মানুষ, চতুর্থ স্থানে উদ্ধব ঠাকরে, ৬১.৮ শতাংশ মানুষ তার কাজে সন্তুষ্ট। এই তালিকায় প্রথম দশে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আছেন একজন, তিনি হলেন অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, তার কাজে সন্তুষ্ট ৫৬.৬ শতাংশ মানুুষ।
আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আট বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে নরেন্দ্র মোদির। তার আগে এই জরিপে মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসাবে উঠে এসেছে দুইটি বিষয়- বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি। শতকরা ২৪.৫ শতাংশ মানুষ মূল্যবৃদ্ধিকে সমস্যা বলে মনে করছেন। ১৩.৬ শতাংশ মানুষের কাছে বেকারত্ব, ১০.৩ শতাংশ মানষের কাছে কৃষক আন্দোলন ৬.২ শতাংশ মানুষের কাছে নোট বাতিল বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ফের দিল্লিতে ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদিই বিজেপির ট্রাম্প কার্ড বলে বিবেচিত হলেও এই জরিপে দেখা গেছে মোদির অন্যতম বিরোধী মুখ হিসাবে উঠে এসেছে মমতা ব্যনার্জি। শতাংশের হিসাবে অনেক কম হলেও শতকরা ১৭ ভাগ মানুষের অভিমত বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মমতা ব্যনার্জি সেরা, ১৬ শতাংশের পছন্দ অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ১১ শতাংশের পছন্দ রাহুল গান্ধী।
তবে দেশে যদি এখনই সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পাবে ২৯৬ টি আসন (সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত ৩৫২ টি আসনের থেকে ৫৬ টি কমবে) এবং বিজেপি একক ভাবে পেতে পারে ২৭১ টি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পেতে পারে ১২৬ টি এবং অন্যরা পেতে পারে ১২০ টি আসন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল