২১ মে, ২০২২ ১১:২৪

বাংলাদেশি নাগরিককে মমতার দলের প্রার্থী করার অভিযোগ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশি নাগরিককে মমতার দলের প্রার্থী করার অভিযোগ

আলো রানী সরকার

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নারী নেত্রী আলো রানী সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অধিকারী বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার এই সম্পর্কিত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী জানান, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে কোনো ব্যক্তি নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করতে পারে না, সেটা বেআইনি।

গত ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন আলো রানী সরকার। নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার এর কাছে পরাজিত হন তিনি। এরপরই ওই নির্বাচনী ফলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যেতেই বিপাকে পড়েন তিনি। মামলায় শুক্রবার কার্যত কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে।

আদালতের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী আলো রানীর দায়ের করা ইলেকশন পিটিশন খারিজ করে দেন। এমনকি মামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূল প্রার্থীর দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে, তাই মামলাকারী নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করতে পারেন না। আদালতের প্রশ্ন, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও কীভাবে আলো রানী ভারতীয় প্যান কার্ড পাসপোর্ট-আধার কার্ড পেলেন। এই সম্পর্কিত হাইকোর্টের রায়ের কপি জাতীয় নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর কথা বলেন আদালত। তার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিতে পারে।

জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলীর বৈদ্যবাটিতে আলো রানীর জন্ম। ১১ বছর বয়সে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের ডাক্তার হরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর পাকাপাকিভাবে তিনি বাংলাদেশের বরিশালের উজিরপুরে থাকতেন। বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় তার নাম ওঠে, এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পান আলো রানী। বর্তমানে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের কাঁচরাপাড়ায় বসবাস করেন এই নারী নেত্রী। একুশের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু চলতি বছরের গোড়ার দিকে  তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে শুক্রবার রাতে আলোরানী সরকার সাংবাদিকদের জানান, ‘১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে আমার জন্ম। আমার বাবা, কাকারা এখানেই থাকেন। তাই কেউ যদি আমাকে বাংলাদেশি বলে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন, অষ্টম শ্রেণির ভুয়া সনদ দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আদতেও মন্ডলপাড়া স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেননি। তার ভিত্তিতে আমি মামলা করেছিলাম। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আমি ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছি।’

আলো রানীর অভিযোগ, ‘এটি একটি চক্রান্ত। আমরা মমতা ব্যানার্জির সৈনিক, এর শেষ দেখে ছাড়ব। রায় আমার পক্ষেই হবে এবং স্বপন মজুমদারকে ওই স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

অন্যদিকে এ ব্যাপারে টেলিফোনে স্বপন মজুমদার জানান, ‌‘ঘটনাটি সত্য। আদালতের তরফে নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে, আলো রানী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর