মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

রং নম্বর ভয়ঙ্কর

মির্জা মেহেদী তমাল

রং নম্বর ভয়ঙ্কর

অপরিচিত নম্বর থেকে সীমার ফোনে কল আসে। হ্যালো, কে বলছেন? পাল্টা জবাব আসে— আপনি কেমন আছেন? হ্যাঁ, আমি ভালো আছি, কিন্তু আপনি কে? আমি আপনার পরিচিত। কী বলছেন এসব, আমি আপনাকে চিনি না। সমস্যা নাই চিনে নেবেন। এমন এক কথা দুই কথায় তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। মাঝে মধ্যেই এমন কথাবার্তা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শরীয়তপুর সখীপুরের আল মামুন ফোনালাপের ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে রাজবাড়ীতে যেত মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে। সীমাও দেখা করত। সীমা বুঝতে পারে মামুন তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু সীমা তাকে বন্ধু হিসেবেই মনে করে। এ কথা জানিয়েও দেয় মামুনকে। মামুন মানতে চায় না। সে ভালোবাসা চায়। একদিন দুপুরে মামুন রাজবাড়ী আসে। এবার আসে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে। সীমা তার কথা মতো দেখা করতে বাসা থেকে বের হয়। আগে থেকে ওতপেতে থাকা মামুন সীমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপরই লাপাত্তা। পুলিশকে জানানো হয়। একদিন পর পুলিশ সীমাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর থেকে। সীমা বুঝতেও পারেনি, রং নম্বরে পরিচয় হলেও মামুন সম্পর্কে কিছুই জানত না। যে কারণে তার ভয়ঙ্কর পরিণতি বরণ করতে হয়। ভোলার তানজিম আক্তারের সঙ্গে একইভাবে রং নম্বরে পরিচয় হয় মহব্বত হাওলাদার (১৯) নামে এক তরুণের সঙ্গে। রং নম্বরে পরিচয়ের ভয়ঙ্কর পরিণতি বরণ করতে হয়েছে তাকে। জীবন দিতে হয়েছে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগের পর। হেলাল রাঢ়ী চট্টগ্রামে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। তার তিন সন্তানের মধ্যে তানজিম এসএসসি পাস। স্ত্রী-সন্তানরা ভোলায় থাকেন। তানজিম ভোলা থেকে এসএসসি পাস করে। দুই মাস আগে মোবাইল ফোনে রং নম্বরের মাধ্যমে মহব্বত হাওলাদার (১৯) নামের একজনের সঙ্গে তানজিমের পরিচয় হয়। তিনি তানজিমের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতেন। তানজিম কোন কলেজে ভর্তি হবে, তা নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্দ্ব্ব লাগে। সম্প্রতি তানজিমের সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে, এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। তানজিম ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। গত ১৪ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ভোলায় উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে রাঢ়ীবাড়িতে রাতে ঘুমের মধ্যে এই দুই বোন একসঙ্গে অ্যাসিডদগ্ধ হয়। মেয়েদের চিৎকারে ছুটে গিয়ে তাদের ধরলে মা জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতও অ্যাসিডে দগ্ধ হয়। ঘটনার পর ১৫ মে ভোলা সদর মডেল থানায় তানজিম ও মারজিয়ার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাসিডে তানজিমের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক চোখ, এক কান ও নাকের খানিকটা গলে যায়। আরেক চোখের অবস্থাও ভালো ছিল না। মুখ থেকে বুকের নিচ পর্যন্ত গভীরভাবে দগ্ধ হয়। চিকিৎসকরা জানান, তানজিমের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়। গত ৬ জুলাই অ্যাসিডদগ্ধ তানজিম আক্তার (মালা) মারা গেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সিটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তানজিমকে প্রথমে রাজধানীর মিরপুরে অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রাজধানীর সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিল তানজিম। সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেফতারের পর ২৬ মে মহব্বত হাওলাদার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে অ্যাসিড মারার কথা স্বীকার করেন। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর