সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

কাশিমপুর রাজবাড়ীর শেষ অংশটুকু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

কাশিমপুর রাজবাড়ীর শেষ অংশটুকু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

নওগাঁর রানীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর পাশে কাশিমপুর রাজবাড়ী। এটি উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত। রাজবাড়ীটি পাগলা রাজার বাড়ি বলেও পরিচিত।  এখন শেষ অংশটুকুও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে মন্দিরের কিছু অংশ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাশিমপুর পাগলা রাজা নাটোরের রাজার বংশ। শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সবাই ভারতে চলে যান। শুধু ছোট রাজা শ্রী শক্তিপ্রসন্ন লাহিড়ী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত কাশিমপুর রাজবাড়ীতে বসবাস করতেন। সময়ের বিবর্তনে তিনিও এক সময় কিছুটা চুপিসারে রাজবাড়ী স্টেটের অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান। রাজবাড়ীটি দুই একর ১৯ শতক জমির ওপর। এই রাজবাড়ীর নিদর্শনগুলো দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসপ্রায়। রাজবাড়ীর মূল ভবনের সামনের চারটি গম্বুজ, উত্তর পাশে হাওয়াখানা ও পশ্চিম পাশে একটি দুর্গা মন্দির ছিল। মন্দিরের পাশে ছিল রাজবাড়ীর বৈঠকখানা, পুকুর ও নদীর ধারে একটি কাচের ঘরের তৈরি বালিকা বিদ্যালয়।

বর্তমানে রাজার জায়গার কিছু অংশ এখন কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মন্দিরের কিছু অংশ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অবহেলা-অযন্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়ীটির শেষ অংশটুকু এখনো অনেকে দেখতে আসে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে রাজবাড়ীটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। কাশিমপুর রাজার শত শত বিঘা জমি ও পুকুর স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৌশলে দখলে রেখেছে। দায়িত্বশীল মহল নজর না দেওয়ায় রাজবাড়ীটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান জানান, স্বাধীনতার পর কাশিমপুর রাজার বংশধররা কয়েক দফায় সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি রাজার এই বিশাল সম্পত্তি দখলে নেয়। একসময় বিভিন্ন কায়দায় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে লিজ নেওয়ার কথা শুনেছি। এমনকি বড় বড় দালানকোঠা ঘেরা প্রাচীর ও রাজার প্রাসাদের ইট খুলে প্রকাশ্যে অথবা রাতের আঁধারে স্থানীয়রা লুটপাট করে বিক্রি করে দিচ্ছে। রাষ্ট্র রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করলে এখানে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান।

সর্বশেষ খবর