মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গবেষণায় বিদেশ যাত্রা

মির্জা মেহেদী তমাল

গবেষণায় বিদেশ যাত্রা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একজন শিক্ষকের কাছে একটি আমন্ত্রণপত্র আসে। বিদেশে আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ। শাবিপ্রবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সেই শিক্ষক মেইল খুঁটিয়ে দেখেন। ইমেইলে জানানো হয়, ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিসেস অ্যান্ড ইনফেকশনস’ শিরোনামের ওই সম্মেলন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সেমিনারে যোগদান করতে আগ্রহী হলে পাল্টা মেইলে জবাব দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। শিক্ষক মানসিকভাবে রাজি আছেন যোগ দিতে। এমন অনেক সেমিনার হয়ে থাকে দেশ-বিদেশে। সেটি জানেন সেই শিক্ষক। তবে এসব সেমিনারে সবাই যেতে আগ্রহী থাকেন। এ কারণে কে যাবে কে যাবে না, এ নিয়ে একটা ঠা-া প্রতিযোগিতা থাকে সবার মাঝে। যে কারণে বিষয়টি কারও সঙ্গেই শেয়ার করেননি শিক্ষক। পাল্টা মেইলে শিক্ষক তার আগ্রহের কথা জানান। দুই দিন বাদে আবারও মেইল আসে শিক্ষকের কাছে। আয়োজকরা তাতে সম্মেলনের কিছু নিয়ম-কানুন জানায়। মেইলে আয়োজকরা জানায়, সম্মেলনে যাওয়া-আসা ও খাওয়া বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। তবে থাকা বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এরপর দফায় দফায় ইমেইলে যোগাযোগ করে তারা। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরের দুটি হিসাব নম্বর পাঠানো হয় মেইলে। সেই দুটি হিসাব নম্বরে শিক্ষক ৫ হাজার ৬০৮ ডলার পরিশোধ করেন। তবে একবারে সব অর্থ নেয়নি তারা। সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়ে পর্যায়ক্রমে তার কাছ থেকে ৫০০ ডলার, ৩ হাজার ৩০৮ ডলার এবং ১ হাজার ৮০০ ডলার নেয় তারা। শিক্ষক যুক্তরাষ্ট্রে যেতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

কিছুদিন পর আবারও মেইল। শিক্ষককে অনুরোধ করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এবং ভিসা প্রসেসিংসহ সম্মেলনের নানা কাগজপত্র সব রেডি করা হয়েছে। সেসব ডকুমেন্ট যেন শিক্ষক বুঝে নিতে ঢাকায় দেখা করেন। মেইলে যোগাযোগের জন্য একটি নম্বরও দেওয়া রয়েছে। শিক্ষক মেইল পেয়ে সেই নম্বরে যোগাযোগ করেন। একজন বিদেশি শিক্ষককে বলেন দেখা করতে। দেখা করার জন্য শিক্ষককে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে আসতে বলেন। শিক্ষক সময় মতো সেখানে গিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। একজন বিদেশি তার কাছে এসে তাকে একটি লাগেজ ধরিয়ে দেন। সেই বিদেশি লাগেজ দিয়ে কুশল বিনিময় করেই চলে যান। পরে তিনি দেখেন লাগেজে ডিজিটাল লক রয়েছে। তিনি বিমানবন্দরে গিয়ে লাগেজ স্ক্যান করে দেখার অনুরোধ করেন। বিমানবন্দর কর্মকর্তারা তা স্ক্যান করে দেখতে পান ভিতরে একটি যন্ত্র আছে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ লাগেজটি আটক করেননি। শিক্ষক লাগেজ নিয়ে সিলেটে ফিরে যান। এ সময় ওই চক্রের আরেক সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন এবং লাগেজটি দেখতে চান। পুরো ঘটনায় শিক্ষকের সন্দেহ হলে তিনি পরিচিত পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান। টের পেয়ে পালিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্য। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে নাইজেরিয়ান এক নাগরিক ডোনাটাস ইমিকা ওনিজুয়াকে আটক করে। পুলিশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা সম্মেলনে পাঠানোর কথা বলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকের কাছ থেকে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি একটি প্রতারক চক্র। প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে জাল ডলার তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ওই ব্যক্তি নাইজেরিয়ার নাগরিক। তার নাম ডোনাটাস ইমিকা ওনিজুয়া।

এমন আরও বেশ কয়েকটি চক্র বিদেশে নানা সম্মেলনের কথা বলে প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ তৈরি করেছে। যেখানে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর