বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাবির হলে পিটিয়ে চার ছাত্রকে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাস পেরোতে না পেরোতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার  হলের গেস্টরুমে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই শিক্ষার্থীদের শাহবাগ থানার হেফাজতে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় সন্দেহবশত দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির সন্দেহে’ জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গেস্টরুমে ডেকে আনেন ছাত্রলীগের নেতারা। তবে ‘শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়’ স্বীকার না করায় তাকে মারধর শুরু করেন নেতারা। পরে ওই শিক্ষার্থীর ‘মেসেঞ্জার চ্যাট-লিস্টে’ শুরুতে থাকা তার আরও তিন বন্ধুকে ডেকে আনা হয়। এরপর হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা এসে রড, লাঠি দিয়ে তাদের মারধর করেন। মারধরে গুরুতর আহত হন ওই চার শিক্ষার্থী। পরে হলের আবাসিক শিক্ষক বিল্লাল হোসেনের উপস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাদের শাহবাগ পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয় পুলিশ। মারধরের শিকার চার শিক্ষার্থী হলেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২য় বর্ষের মুকিনুল হক চৌধুরী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২য় বর্ষের মিনহাজ উদ্দিন ও আরবি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দিন, রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের সানোয়ার হোসেন প্রমুখ। হল সংসদের সহসভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত বলেন, আমাদের কাছে তাদের মেসেঞ্জার কথোপকথনের কিছু স্ক্রিন শট আসে। আমরা হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের খবর দেই। পরে আবাসিক শিক্ষব বিললাল স্যারের উপস্থিতিতে তাদের পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। ‘পুলিশ কেন তাদের হাসপাতালে নিয়েছিল’-এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি বলতে পারব না’। এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এসেছে। আমি বলে দিয়েছি, কোনো অভিযোগ না পেলে যেন তাদের হয়রানি করা না হয়।’ কোনো পক্ষ থেকে মারধরের কোনো অভিযোগ পাননি বলেও জানান তিনি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন জানান, হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদেরকে আমাদের কাছে দিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় পরে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ঢাবি হলে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, ভুক্তভোগীর অবস্থান কর্মসূচি : চার শিক্ষার্থীকে ‘শিবির সন্দেহে’ রাতভর মারধরের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’। গতকাল বিকালে রাজুভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, প্রতিনিয়ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীরা নির্যাতিত হচ্ছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কোনো পদক্ষেপ নিতে কখনো দেখা যায়নি। অবস্থান কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী : সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় সুুষ্ঠু বিচার দাবি করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজুভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাজুতে অবস্থান নেয় মুকিমুল হক চৌধুরী নামের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী। তার দাবি, একটি মিথ্যা ও বানোয়াট স্ক্রিনশট দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

মুকিম বলেন, আমাদের মারধরের মূল কারণ একটি স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে। যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমিসহ আরও তিনজনকে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। কিন্তু রড, স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এর সঙ্গে হল সংসদ ও ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত বলেও দাবি করেন এ শিক্ষার্থী। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর