শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় মাদক বাণিজ্য রমরমা

সাঈদুর রহমান রিমন

ঢাকায় মাদক বাণিজ্য রমরমা

ঢাকায় মাদক বাণিজ্য রমরমা হয়ে উঠেছে। প্রায় এক হাজার স্পটে রাত-দিন চলছে মাদক কেনাবেচা। অলিগলি, মহল্লা পর্যায়ে অনেকটা বেপরোয়াভাবেই চলছে এ কারবার।

রাজধানীতে পাইকারিভাবে মাদক সরবরাহের ক্ষেত্রে কমবেশি ১০টি বড় সিন্ডিকেট বেপরোয়া। এর মধ্যে মতিঝিল-ফকিরাপুল, মালিবাগ-গুলবাগ, শাহজাহানপুর, বারিধারা-গুলশান, উত্তরা, বাড্ডা-ভাটারা, মুগদা-মানিকনগর, লালকুঠিতে সরবরাহকারীরা বেচাকেনার শীর্ষে রয়েছে। এসব সিন্ডিকেট বিগত সাত দিনে অন্তত ৫ কোটি টাকার মাদক আমদানি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরামহীন অভিযানের মুখেও নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে মাদকের বাজার চাঙ্গা রেখেছে ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকজন গডফাদার বিভিন্ন অভিজাত ভবনে রীতিমতো অফিস-চেম্বার সাজিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পল্লবী, কালশী, জেনেভা ক্যাম্প, কমলাপুর রেলস্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চানখাঁরপুল, গে-ারিয়া, টিটিপাড়া, খিলগাঁও, পুরানা পল্টন, বাড্ডা, ভাটারা, বনানী, গুলশান, মতিঝিল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ বনশ্রী, ধানমন্ডি, মিরপুর, তেজগাঁও রেলবস্তি, উত্তরা, গাবতলী, কারওয়ানবাজার রেলবস্তি, রূপনগর, শাহআলী,  বংশাল, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক স্পটে দাপটের সঙ্গেই চলে মাদকের কেনাবেচা। আর এসব স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে চিহ্নিত গডফাদাররা। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর প্রায় এক হাজার স্পটে এখন রাত-দিন চলছে মাদক কেনাবেচা। দুর্র্ধর্ষ আড়াই সহস্রাধিক ফেরারি আসামি এসব মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে। পুলিশের খাতায় বছরের পর বছর ধরে ‘পলাতক’ এই আসামিরা ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও মদের স্পট বানিয়ে প্রকাশ্যে বেচাকেনা করছেন। সূত্র জানায়, সোর্স পরিচয়ধারী ব্যক্তিরাই রাজধানীর দাপুটে মাদক ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা মাঝেমধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক ব্যবসায়ী দু-চারজনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন টিম ব্যবহার করে সোর্স নামধারীরা প্রতিপক্ষ গ্রুপের মাদক আখড়ায় অভিযান চালায় এবং সেখানে জব্দকৃত সিংহভাগ মাদকই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে খুচরা বাণিজ্য করছে। বেশ কয়েকটি থানার এসআই-এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তার হাত ঘুরেও মাদকের সরবরাহ যায় খুচরা বাজারে। মাদক বাণিজ্যে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে ১৭ পুলিশ সদস্য আটক হয়েছেন, বিভাগীয় শাস্তিও পেয়েছেন অনেকে। তবে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তারা বলেন, মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চলে প্রশাসনের, আটক হন ক্রেতা ও নিরপরাধ পথচারীরা। সোর্সদের মাধ্যমে পথচলা মানুষের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়েও গ্রেফতার-হয়রানির অসংখ্য নজির রয়েছে। তবে বরাবরই মাদকের মূল বেপারিরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বেপারিদের সঙ্গে মাদকের মাসোয়ারা লেনদেনের গোপন সমঝোতায় থানা, পুলিশ, প্রশাসনের দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাই গ্রেফতার ও হয়রানিমুক্ত থাকে তারা।

সর্বশেষ খবর