সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজ প্রকৃতির বাটালি হিল

পাখির চোখে চট্টগ্রাম

মোস্তফা কাজল, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে

সবুজ প্রকৃতির বাটালি হিল

নৈসর্গিক বাটালি পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতি সবাইকে আকৃষ্ট করে। আবার অনেকে বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস এ পাহাড়। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে অনেকে আসেন স্বচ্ছ অক্সিজেন গ্রহণ করতে। এ ছাড়া ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে পাহাড়-পর্বত দর্শন এক দুর্নিবার আকর্ষণ। এ কারণে এই পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে তারা বারবার ছুটে যান। দূরে-কাছে পাহাড়ই যেন এক অনাবিল আনন্দের ভ্রমণ গন্তব্য। এ শহরের শত শত সাধারণ মানুষ অবসরে সুযোগ পেলে বিশুদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ছুটে যান বাটালি পাহাড়ের চূড়ায়। শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে টাইগারপাস এলাকায় বাটালি পাহাড় (হিল) অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানি মোড়ের উত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেঁষে ওপরের দিকে উঠে গেছে বাটালি পাহাড়ের রাস্তা। এ রাস্তা ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির পেছন দিয়ে চলে  গেছে। বাটালি পাহাড় ‘জিলাপি’ পাহাড় নামেও পরিচিত। বাটালি পাহাড়ের রাস্তাটিও জিলাপির মতো দেখায়। এ কারণে জিলাপি পাহাড় বলা হয়। অসংখ্য পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা পুরো চট্টগ্রাম মহানগরী। আর চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হলো বাটালি পাহাড়। চট্টগ্রাম ভ্রমণে যে কোনো পর্যটক বাটালি পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতির স্বাদ উপভোগ করেন। বাটালি পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে পুরো চট্টগ্রাম শহরকে দেখা যায়। অনেকে বলেন, পাখির চোখে চট্টগ্রামকে দেখা যায়।

পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সময় অন্যরকম একটা চমৎকার অনুভূতি হয়। বাটালি পাহাড়ের ওপরে পৌঁছে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য জায়গা পাবেন। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়াটিকে বলা হয়- শতায়ু অঙ্গন। বাটালি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠলে পুরো চট্টগ্রাম শহরকে এক নজরে দেখে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। অনেক বছর আগে দূরসমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের দিকনির্দেশনার জন্য বাটালি পাহাড়ের চূড়ায় একটি বাতিঘর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাটালি পাহাড়ের ওপরে একটি কামান স্থাপন করা হয়েছিল। গত ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাটালি পাহাড়ে বাংলাদেশ পুলিশের সৌজন্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে ১২ হাজার গাছ রোপণ করা হয়। এসব গাছের মধ্যে জলপাই, কাঁঠাল, কালোজাম, লিচু, কমলা, আম, জাফরান, চন্দন, কফি ও অর্জুন উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, বাটালি পাহাড় বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগের নিজস্ব সম্পত্তি। ওই পাহাড়ের বিভিন্ন চূড়ায় চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদফতরের অফিস ও কয়েকটি বাংলো রয়েছে। পাহাড়টির উচ্চতা অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও অনায়াসে এর চূড়ায় ওঠা যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক নিসর্গে ভরা এই চমৎকার পাহাড়টি চট্টগ্রামের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত হলেও খোদ চট্টগ্রামের স্থানীয় অনেকেই এর অবস্থান সম্পর্কে জানেন না। পাহাড়টিতে ওঠার সময় রাস্তার দুই পাশের সবুজ গাছ-গাছালির সৌন্দর্য দেখে আগত যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। এখানের পরিবেশ বড় বড় গাছ আর সবুজের সমারোহে ভরপুর। এসব গাছ-গাছালিতে বাহারি পাখির কিচিরমিচির শব্দ বিমোহিত করবে। প্রকৃতির এই সবুজ সৌন্দর্য হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চমকে যাবে যে কেউ অচেনা কোনো পাখির ডাকে। আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে মূল চূড়ায় ওঠার সময় চমৎকার অনুভূতি হয়। এখান থেকে পুরো বন্দর নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য চোখ ধাঁধানো মনে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর