চার দিনের সরকারি সফরে আজ জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। টোকিওতে নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠকে বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত খাতে সহযোগিতা বিষয়ক সাতটি সমঝোতা
সই করবেন তাঁরা। পাশাপাশি জাপানের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, চার দিনের এই সফরে জাপানের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত খাতে সহযোগিতা বিষয়ক কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। পাশাপাশি বাজেট সহায়তা ও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ ডুয়েলগেজ ডবল লাইনে উন্নীতকরণে এক্সচেঞ্জ অব নোটস স্বাক্ষরিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও জাপানের কাছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। এটা সহজ শর্তে ঋণ। তারা আমাদের একটা পরিমাণ দিতে রাজি হয়েছে। সফরের আগে এটি আমরা প্রকাশ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হংকং হয়ে বুধবার দুপুরে টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি। সেখানে জাপানের রাষ্ট্রাচার প্রধান ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাঁকে স্বাগত জানাবেন। বিকালে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সম্মানে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি নৈশভোজে অংশ নেবেন। সেখানে জাপানের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক নেতারা উপস্থিত থাকবেন। নৈশভোজ শেষে জাপানের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা একটি বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পরদিন বৃহস্পতিবার টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত একটি মানবসম্পদ উন্নয়ন সেমিনারে তিনি অংশ নেবেন। অদূর ভবিষ্যতে জাপানের প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলাদেশ কীভাবে আরও দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারে সে ব্যাপারে সেমিনারে আলোকপাত করা হবে। এরপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জাইকার প্রেসিডেন্ট। সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় জাইকার সহযোগিতা এবং জাইকার চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবারের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেবে জাপান সরকার। বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। দুপুরে জেট্রোর প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।
এরপর বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিয়ে জাপানি বিনিয়োগকারীদের অবহিতকরণ এবং বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশে আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের উদ্দেশে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। ওইদিন বিকালে জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি দেবে। সফর শেষে শনিবার সকালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে টোকিও থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকায় ফিরবেন।
জাপানে শ্রমশক্তি রপ্তানি নিয়ে রুহুল আমিন বলেন, কর্মক্ষম মানুষের চাহিদা জাপান বিদেশ থেকে পূরণ করছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের একটি সমঝোতা রয়েছে। এর পরিধি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের বিএমইটির সঙ্গে জাপানের দুটি বেসরকারি কোম্পানির সমঝোতা হবে। ওই কোম্পানি দুটি জাপানের ভাষা শিক্ষা এবং বিশেষায়িত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে কাজ করবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া এবং প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক নুর এ আলম জানান, জাপান মোট ১৬টি খাতে লোক নিতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তারা ভাষা ও নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ দেবে। এর মধ্যে কেয়ারগিভার, হসপিটালিটিসহ অন্যান্য খাত রয়েছে।