কোরবানির ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে ঈদের পরের দুদিন ছুটি কমিয়ে ৩ ও ৪ জুন ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় সরকার ১০ দিনের ছুটির কথা ভাবছে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু কোনো সমীক্ষা ছাড়াই এই ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়বেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে সরকারের সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত ঈদুল ফিতরে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ ছিল ঈদের আগে ৪ দিনের লম্বা ছুটি, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী নেতাদের অনুপস্থিতিতে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টা।
এই কারণে ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, নিহত ২০.৮৮ শতাংশ এবং আহত ৪০.৯১ শতাংশ কমেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমানোর জন্যও ব্যবহার করা জরুরি। এ জন্য ছুটি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে ঈদের আগে ছুটি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
সংগঠনটি সুপারিশ করেছে, ঈদের পরের ১১ ও ১২ জুনের ছুটি বাতিল করে ৩ ও ৪ জুন ছুটি নিশ্চিত করা হলে মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাতেও ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। এতে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে এবং পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অন্যান্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ। পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ। জাতীয় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করা। কালবৈশাখী মৌসুমে নৌ-পথে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ রাখা।
সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। জাতীয় মহাসড়কের টোল পয়েন্টগুলোতে যানজট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। সড়কে চলাচলকারী পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে যানজট তৈরি এবং সড়কের পাশে পশুরহাট থেকে সৃষ্ট যানজট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। ঈদের আগে প্রতিটি জাতীয় মহাসড়কে সড়ক নিরাপত্তা অডিট নিশ্চিত করা। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় রাখা। সড়কে ডাকাতি ও পথে পথে ছিনতাই বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায় দাশ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল