‘ভারত-বাংলাদেশের জিডিপির বড় অংশ ধনীদের কাছে চলে যাওয়ার কারণেই দেশে দারিদ্র্যের হার কমছে না’ বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জি। এজন্য টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জিডিপি পরিসংখ্যানের বাইরে তাকানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জিডিপির সুবিধা যেন প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো যায়, তা নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘উন্নয়নের রূপান্তর : মূল্যায়ন, নিরীক্ষা ও নৈতিকতার মাধ্যমে জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তোলা’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, জিডিপির ওপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়। বড় দেশগুলোতে জিডিপি বেশি। তবে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে কথা বলা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) ইনডিপেন্ডেন্ট ইভ্যালুয়েশন অফিস (আইইও), অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং সম্মতি ও তদন্ত বিভাগ যৌথভাবে উচ্চপর্যায়ের এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির অগ্রাধিকার অর্জনের মূল স্তম্ভ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে জবাবদিহি, মূল্যায়ন এবং সততা স্থাপনের ওপর আলোকপাত করা হয়। সেমিনারে সমন্বিত মূল্যায়ন, নিরীক্ষা ও সম্মতি ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের জন্য এনডিবির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়। এতে উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি খাতের নেতাসহ ১৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন। এটি উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি সক্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
অভিজিৎ ব্যানার্জি তাঁর বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন, জিডিপি দরিদ্রদের কাছে কতটা পৌঁছায় এবং ধনীদের দ্বারা কতটা পুঞ্জীভূত হয়, এর ওপর নির্ভর করে দারিদ্র্যের হার কতটা কমবে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোতে ৩০-৪০ বছর ধরে জিডিপির একটি বড় অংশ ক্রমবর্ধমানভাবে ধনীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ফলস্বরূপ জিডিপি বৃদ্ধি সত্ত্বেও দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।
এদিকে এদিন ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) আয়োজিত এক সেমিনারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেমিনারে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধানদের মধ্যে জবাবদিহি মূল্যায়ন এবং সততা, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল স্তম্ভের ওপর আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি বিনিয়োগে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ বৈদেশিক প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে। টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। জবাবদিহি, স্বচ্ছতা এবং নীতিগত শাসনব্যবস্থা, এগুলোর ব্যবহার জরুরি। মূল্যায়ন, নিরীক্ষা এবং সম্মতি হলো সেই হাতিয়ার, যা আমাদের এই স্তম্ভগুলো তৈরি করতে সহায়তা করে। এগুলো নিশ্চিত করে যে আমাদের নীতি এবং প্রকল্পগুলো কেবল কাগজকলমে বিদ্যমান নয় বরং আমাদের নাগরিকদের জন্য বাস্তব সুবিধা দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রকল্পে অডিট দরকার। সবার অংশগ্রহণে এগুলো মূল্যায়ন করা দরকার। আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নে ডোনার গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে ডোনারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পে সোশ্যাল অডিট দরকার। সোশ্যাল অডিটি বলতে যেখানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে সেই স্থানীয় লোকজন যেন এটা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারে। যেমন প্রকল্পের নাম, প্রকল্পের কাজ কী, প্রকল্পের ব্যয় কত এবং কোন সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া যদি সড়ক নির্মাণ করা হয় সড়কটি কত কিলোমিটার হবে, এটার বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে জানাতে হবে। এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের টাকা কী হচ্ছে, এটা সবার জানা দরকার। অডিটরদের প্রিপার হতে হবে। ম্যানিপুলেট যেন না হয়। আমাদের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী দরকার।