বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কবে মুক্ত হবে মুক্তাঙ্গন

২৭ ডিসেম্বর উচ্ছেদ করা হলেও আবার কারস্ট্যান্ডের দখলে, আগেও উচ্ছেদ হয়েছে কমপক্ষে ২০ বার, এক দশক ধরে বেদখল

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

কবে মুক্ত হবে মুক্তাঙ্গন

রাজধানীর মুক্তাঙ্গন পার্কের অবৈধ স্থাপনায় ২৭ ডিসেম্বর উচ্ছেদ চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পার্কে অবৈধভাবে রাখা কয়েক শ গাড়ি সরানোর পাশাপাশি অভিযানে কয়েকটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল পার্কে গিয়ে দেখা যায়, আবারও আগের চিত্র। মাঠজুড়ে অবৈধভাবে রাখা হয়েছে সারি সারি গাড়ি। এর আগেও কমপক্ষে ২০ বার উচ্ছেদ করা হয়। জনমনে প্রশ্ন, কবে মুক্ত হবে মুক্তাঙ্গন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মুক্তাঙ্গন পার্কে রাখা গাড়িসহ অবৈধ স্থাপনা আমরা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করেছি। পার্কটি সব সময় উন্মুক্ত থাকবে। এখানে আবারও গাড়ি রাখার কথা জানতে পারলে আমরা উচ্ছেদ করব। এখানে কোনো গাড়ি রাখতে দেওয়া হবে না। পার্কটি ঘিরে প্রকৌশল বিভাগ প্ল্যানিং করছে।’ রাজধানীর পল্টন ও জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি অবস্থানে মুক্তাঙ্গন পার্ক। তবে এটি অস্তিত্ব হারানোর পথে। কিছুদিন আগেও পার্কের প্রায় ৮৩ শতাংশ জমির পুরোটাই ছিল দখলদারদের কবজায়। ব্যবহার হয়েছে কারস্ট্যান্ড হিসেবে। এক দশক ধরে কয়েক শ প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের দখলে পার্কটি। সিটি করপোরেশন এর আগে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কাজ হয়নি।

রাজধানীর পল্টনে জিপিও মোড়ের পাশে অবস্থিত মুক্তাঙ্গন। ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর দক্ষিণ ঢাকাকে অবৈধ দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী পার্কটিকে আধুনিক ডিজাইনে রূপ দেওয়া হচ্ছে। পার্কটির চারপাশে কোনো সীমানা থাকবে না। সব মানুষ যেন পার্কটির ভিতরে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া পার্কের ভিতর একটি বর্জ্য রাখার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) করা হবে। এ পার্কে ডিএসসিসির একটি আধুনিক পাবলিক টয়লেট রয়েছে। পার্কটির উন্মুক্ত স্থানটিকে বলা যায় ‘আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার’। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেই ইতিহাস আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক এসেছে। জানা গেছে, পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে গড়ে ওঠা এই পার্কটি নগরবাসীর ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জিপিওর পশ্চিম কোলঘেঁষা পার্কটি গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে। বিশেষ করে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর কমসূচি এখানে বেশি হতো। নব্বইয়ের দশকে মুক্তাঙ্গন পার্কে প্রায় প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হতো সভা-সমাবেশ। ২০০০ সালের পর থেকেই পার্কটিতে অবৈধ দখল শুরু হয়। রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ীরা পার্কটির একাংশ দখল করে নেয়। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সভা-সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো পল্টন ময়দান। মুক্তাঙ্গন সভা-সমাবেশের জন্য উপযুক্ত কখনো ছিল না। তবে সরকার পল্টন ময়দান বন্ধ করে দেওয়ার পর বিকল্প হিসেবে মুক্তাঙ্গন ব্যবহার করা হতো। এখন সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তাটি ছাড়া রাজধানীতে উন্মুক্ত জায়গায় কথা বলার আর কোনো জায়গা নেই। আমরা সভা-সমাবেশের জন্য পল্টনের বিকল্প একটি জায়গা চাই।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর