শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

একাদশ সংসদের ২৮ মাসে ১৬ এমপির মৃত্যু

করোনা, বার্ধক্যসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা ১৪ জন আওয়ামী লীগের, একজন জাতীয় পার্টি ও অন্যজন জাসদের

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ ২৮ মাসে হারাল ১৬ জন এমপিকে। এর মধ্যে ১৪ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বাকি দুজনের একজন জাতীয় পার্টির ও একজন বাংলাদেশ জাসদের। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং বার্ধক্যজনিতসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এসব আইন প্রণেতা। এর মধ্যে সাবেক তিনজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এটা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদের পুরো মেয়াদকালে (৫ বছরে) মারা গেছেন ১৫ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের ঠিক পরই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১) মারা যান। তিনি সংসদের একটি অধিবেশনেও যোগ দিতে পারেননি। এমনকি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও নিতে পারেননি সৈয়দ আশরাফ। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ গত বুধবার (১৪ এপ্রিল) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি কুমিল্লা-৫ আসন থেকে পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এর আগে স্ট্রোক করে ৫ এপ্রিল মারা যান ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আসলামুল হক আসলাম। এ বছরের ১১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস।  ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি মারা যান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন (বাগেরহাট-৪), ১৮ জানুয়ারি মারা যান আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান (বগুড়া-১), ২১ জানুয়ারি মারা যান সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক (যশোর-৬), ২ এপ্রিল মারা যান সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (পাবনা-৪), ৬ মে হাবিবুর রহমান মোল্লা (ঢাকা-৫), করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ জুন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (ঢাকা-১৮) ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ জুলাই ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬) মারা যান।

২০১৯ সালে ৯ জুলাই মারা যান আওয়ামী লীগের রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪), ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ (রংপুর-৩) মারা যান। ওই বছরের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮), ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের মো. ইউনুস আলী সরকার (গাইবান্ধা-৩) মারা যান।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, রীতি অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য অথবা সাবেক সংসদ সদস্য মারা গেলে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সংসদে অনুষ্ঠিত জানাজায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ছাড়াও নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা হলে পান গার্ড অব অনার। জানাজায় সহকর্মীরা ছাড়াও সংসদে কর্মরত ও আশপাশ এলাকায় বসবাসকারীরা অংশ নেন। গত বছর মার্চের পর থেকে যারাই মারা গেছেন করোনার কারণে কারও জানাজাই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়নি।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ‘মানুষের জন্য রাজনীতি’ এটা বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক সংসদ সদস্য। ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবে আপ্লুত হয়ে পড়েন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই সংসদের অনেক সদস্যকে হারাতে হয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’ ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য চলাকালে দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুর খবর পান। তিনি বলেন, ‘এইমাত্র খবর পেলাম আসলামুল হক ইন্তেকাল করেছেন। অত্যন্ত দুঃখের খবর। গতকালও তিনি সংসদে ছিলেন।’ দশম জাতীয় সংসদে পুরো মেয়াদকালের পাঁচ বছরে দুজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন বিরোধীদলীয় হুইপসহ ১৫ সংসদ সদস্য মারা যান। তাদের মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগের এবং তিনজন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। এদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল এক সংসদ সদস্যকে। এ ছাড়া ওই একই আসনে মারা গেছেন দুই সংসদ সদস্য। দশম সংসদ হারিয়েছে সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান ও বিশিষ্ট তার্কিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তিনি এক সময় রেলমন্ত্রীও ছিলেন। এ ছাড়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ মহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), মোহাম্মদ ছায়েদুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) এবং প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন (ময়মনসিংহ-১)।

প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে হারায় এ সংসদ। মারা যাওয়া আওয়ামী লীগের অন্যদের মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা-১ আসনের মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। ২০১৬ সালের শেষ প্রহরে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। ওই আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন একই দলের গোলাম মোস্তফা আহমদ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার, মাগুরা-১ আসনের মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর, খুলনা-৪ আসনের এস এম মোস্তফা রশিদ, বরিশাল-৫ আসনের মো. শওকত হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ আসনের শওকত মোমেন শাহজাহান, ময়মনসিংহ-৩ আসনের মজিবুর রহমান ফকির ইন্তেকাল করেন। জাতীয় পার্টির কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এ কে এম মাঈদুল ইসলাম এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মো. নাসিম ওসমান মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর