বুধবার, ২৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা আনার পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা আনার পরিকল্পনা

আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা রেখে সে অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া চাহিদাপত্র অনুযায়ী আগামী বছর সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ পাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে বৈদেশিক সহায়তার হার এমনিতেই বেড়েছে। এ ধারা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের খাতে কিছুটা হলেও চাপ কম পড়বে। আগামী অর্থবছর ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এ হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ কম। আর বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা হিসেবে ৯৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ২ লাখ ১২-১৫ হাজার কোটি টাকার মতো, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বাজেট ঘাটতি। এবার প্রথম বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশের ওপরে উঠে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এতদিন যা ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা গেছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। ফলে বাজেট ঘাটতি বাড়লেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়েই থাকবে। এতে করে সামগ্রিক অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ বাড়বে, যা মূলত অর্থনীতির জন্য এক ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। জানা গেছে, বাজেট ঘাটতির অর্থ জোগান দিতে সরকার ব্যাংকিং খাতের ঋণনির্ভরতা কমিয়ে বিদেশি উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে কাজ করছে। আগামী অর্থবছর ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এ হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ কম। অন্যদিকে নতুন বাজেটে বৈদেশিক অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এ হার ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা হিসেবে ৯২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা পাওয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। অবশ্য করোনা মহামারীর এ সময় বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ বেড়েছে। আগামী বাজেটেও বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে, যা অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়ও উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, খসড়া রূপরেখা অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে এ ঘাটতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি বিরাজ করছে, যা বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে। ফলে আগামী অর্থবছরের জন্য এ রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি সামলাতে বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণের প্রতি নির্ভরতা বাড়াতে চায় সরকার। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, কভিড-১৯ মহামারীসহ সার্বিক ব্যয় মেটাতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ছয় মাসে প্রায় ৬৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি উৎস থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ খাত (ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল) থেকে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে গত বছরের তুলনায় ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক ঋণ গ্রহণ মাত্রার হার অর্থনীতিতে এখনো কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পাশাপাশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধকারী হিসেবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। এ জন্য বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণ বাড়লেও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি খুব একটা বাড়বে না।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের অনুকূলে ৩৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন-সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো, যা বাংলাদেশি মুুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ২৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার বেশি। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী অর্থবছরের নেওয়া সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ পাওয়ার পরিকল্পনা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর