রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
এসআই-সার্জেন্টদের গুরুদণ্ড

পিএসসির পরামর্শ থেকে অব্যাহতি চায় পুলিশ

নিয়মিত সভায় উত্থাপনের পর পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে : পিএসসি চেয়ারম্যান

আলাউদ্দিন আরিফ

এসআই (উপ-পরিদর্শক) ও সার্জেন্টসহ সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ নেওয়ার বিধান থেকে অব্যাহতি চেয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পিএসসিকে চিঠি দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগেই আমরা এই চিঠি পেয়েছি। আমাদের নিয়মিত সভায় বিষয়টি উত্থাপনের পর পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া বর্তমানে করোনা সংক্রমণজনিত কারণে আমরা শুধু রুটিন কাজগুলো করি। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ, ঘুষ গ্রহণ বা অন্য কোনো অসদাচরণমূলক অভিযোগ এলে সেগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য এবং বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অনেক সময় চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান বা পদাবনতির মতো গুরুদন্ড দিতে হয়। নিজ ইউনিটের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এ ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হলে কাজে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত পরামর্শের জন্য চিঠি দেওয়ার কারণে পিএসসিতেও কাজের চাপ বাড়ে। তাই বাহিনীর কাজে আরও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে পিএসসির পরামর্শ গ্রহণ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।’

পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদন থেকে জানা গেছে, ‘২০১২ সালের ৩০ জুলাই এসআই ও সমমর্যাদার পদগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পুলিশে এসআই (নিরস্ত্র/সশস্ত্র), সার্জেন্ট ও টিএসআই পদে বর্তমানে অনুমোদিত জনবল ২৬ হাজার ৫১৫ জন। সরাসরি নিয়োগ ও বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যম পদগুলো পূরণ করা হয়। পিআরবি (পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল) অনুযায়ী এসব পদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এসপি। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হলেও পিএসসির এসআরও অনুযায়ী বর্ণিত পদগুলোতে নিয়োগ ও স্থায়ীকরণের বিষয়ে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই মর্মে প্রজ্ঞাপন আছে। কিন্তু সেটি কার্যকর করা হয়নি।’ প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, ‘পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআইসহ সমমর্যাদার পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম জেলা বা অধস্তন দফতরের অধীনে হলে তাদের ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেহেতু পিএসসির অর্ডিন্যান্স বিবেচনায় এসআই বা সার্জেন্ট ও সমমানের পদে নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি জেলা বা অধস্তন দফতর থেকে সম্পন্ন হয় এবং এর নিয়োগকারী কর্মকর্তা এসপি বা সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা, যিনি জেলা বা অধস্তন দফতরের প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাই এসআই বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদন্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার আওতামুক্ত থাকার আইনত স্পষ্ট সুযোগ আছে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘পুলিশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৫০ জন এসআই/সার্জেন্ট, টিএসআই বা সমর্যাদার কর্মকর্তাকে শৃঙ্খলাভঙ্গ, অসদাচরণ ও অন্যান্য বিভাগীয় মামলায় গুরুদন্ড দেওয়া হয়। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এসপি এসব সাজা দেন। সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গুরুদন্ড দিতে হয়। যুগ যুগ ধরে ইউনিটের এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা গুরুদন্ড দেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের অসদাচরণ, অনৈতিক কার্যকলাপসহ অন্যান্য বিভাগীয় শৃঙ্খলাবহিভর্‚ত কাজের জন্য দ্রুত শাস্তি দেওয়া চেইন অব কমান্ড রক্ষার্থে জরুরি। এ ক্ষেত্রে এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ, বাধ্যতামূলক অবসর ও পদাবনতির মতো গুরুদন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ নিতে হয়। প্রতিটি নথিতে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ নেওয়ার বিধান অনুসরণ করতে হলে একদিকে যেমন বিভাগীয় মামলায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়, অন্যদিকে বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বিপুল কার্যভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে সরকারি কর্ম কমিশন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘পুলিশের এসআই ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএসসির পরামর্শ নিতে হবে মর্মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের এসআরও রহিত করে সংশোধিত এসআরও জারি করা হলে বিষয়টি আরও কার্যকর ও সহজ হবে।’

এসআই ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের গুরুদন্ড প্রদানে পিএসসির পরামর্শ গ্রহণ থেকে অব্যাহতি প্রদান-সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারজানা জেসমিন জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দেন। দীর্ঘদিনেও পিএসসি এ বিষয়ে কোনো মতামত জানায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর