বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
সংকটকালে মানুষের পাশে

বসুন্ধরায় খাওন দিল, আল্লায় ভালা করুক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরায় খাওন দিল, আল্লায় ভালা করুক

দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ফারুক হোসেন (৪৫)। কয়েক ধাপে লকডাউনে অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এক দিন কাজ করলে তিন দিন বসে থাকতে হয়। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। গতকাল ময়মনসিংহ মহানগরের ছোটবাজার এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে ফারুক হোসেনের মুখে। আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি। কোনো সাহায্য পাই নাই। আজকে আফনেরা চাল-ডাল-আটা দিলেন। আল্লাহর কাছে হাজার শুকুর। বসুন্ধরার মালিকরে খোদা আরও ভালা রাহুক। গরিবদের দেওয়ার মতো আরও সামর্থ্য আল্লায় জানি হেরে দেয়।’

শুধু ফারুক হোসেনই নয়, ময়মনসিংহে গতকাল এমন চারশ অসহায় কুলির হাতে ত্রাণ তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এসব ত্রাণের মধ্যে ছিল- চাল, তেল, আটা, লবণ, ডাল, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা গুঁড়া ও মাস্ক। এ ছাড়া ঢাকার মৌলভীবাজার ও সাভার, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, খুলনা, যশোর, সিরাজগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামে হাজারো অসহায় পরিবারের মুখে গতকাল হাসি ফুটে ওঠে বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে। বসুন্ধরা গ্রুপের ধারাবাহিক ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও বসুন্ধরা মাল্টি ফুড লিমিটেডের পক্ষ থেকে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

ময়মনসিংহে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দেন এরিয়া ম্যানেজার অরুণ কুমার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেছুয়া বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুভাষ চন্দ্র সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান, স্বদেশ চন্দ্র পাল, ময়মনসিংহ জেলা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাজাহারুল ইসলামসহ প্রমুখ। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষে ময়মনসিংহ জেলা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘খেটে খাওয়া মানুষ আমরা। এই মহামারীতে আমরা কুলি শ্রমিক যারা আছি, ত্রাণ সহায়তা এবং সহযোগিতা সেভাবে পাইনি। এমন অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এ জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ এবং কুলি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা।’

এদিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের তোলাকান্দি এলাকার কারখানা শ্রমিক ফারুক মিয়া গতকাল ত্রাণ হাতে পেয়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। একটি বেকারি কারখানায় চাকরি করতেন তিনি। করোনায় বিধিনিষেধের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বেকার সময় কাটছে তার। এ অবস্থায় সংসারে দেখা দেয় চরম টানাপোড়েন। এ পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহায়তা পাননি তিনি। গতকাল বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ফারুক মিয়া বলেন, ‘হায়া না হায়া থাহি (খেয়ে না খেয়ে থাকি) কেউ হবর (খবর) লয় না। বসুন্ধরা তো আমাগো কিছুদিন চলার বন্দোবস্ত হরছে (করেছে)।’ একই এলাকার আফরোজা নামে এক গৃহবধূ জানান, তার স্বামী একজন হকার। দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার তাদের। করোনায় এতদিন কোনো সহায়তা পাননি। বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তা পেয়ে খুবই খুশি তিনি। ভৈরব আইভি রহমান স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল বেকার হয়ে পড়া ২০০ শ্রমিককে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভৈরব পৌরসভার মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন। এ সময় বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. মুকিতুল ইসলাম, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ভৈরবের পরিবেশক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদপুরের পুরানবাজার এলাকায় বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে গতকাল করোনায় বিপর্যস্ত অসহায় শ্রমিকদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভ সংঘের সভাপতি লায়ন মাহমুদ হাসান খান, চেম্বার সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, চেম্বার পরিচালক সালাউদ্দিন মো. বাবর, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের রিজিওনাল ম্যানেজার মো. এস কে মনিরুজ্জামান, ব্যবসায়ী গোপাল সাহা, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিবেশক সুবল চন্দ্র পোদ্দার প্রমুখ। সাভারে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ১২০ জন কর্মহীন নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল বিকালে সাভারের নামা বাজার চাউল পট্টি এলাকায় লকডাউনে কর্মহীন নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষের মাঝে এসব উপহার (ত্রাণ) সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় সাভার নামাবাজার ব্যবসায়ী নেতা ও ঘোষ অ্যান্ড সন্স মালিক মহেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হারুন মোল্লা, রহমান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী রহমান, দি সাভার এন্টার প্রাইজের মালিক পংকজ কুমার শাহা, বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লি. ও বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন, শামিম রাজাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মৌলভীবাজার টাওয়ারে ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মো. মুসলিম, মো. মাহতাব হোসেন ও মো. শাকিল মিয়া। কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মিরাজুল ইসলাম, নিপান চন্দ্র দাস, জোবায়ের আহমেদ ও আসিফ হাওলাদার।

সর্বশেষ খবর