রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হাওরে বেড়াতে গিয়ে রহস্যময় নিখোঁজ ঢাকার ব্যবসায়ী

প্রতিদিন ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় বেড়াতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন ঢাকার ব্যবসায়ী সৈয়দ জাহেরুর রহমান সাগর। গত শুক্রবার নৌকাভর্তি বন্ধু-পরিজনের সঙ্গে হাওরে বেড়াতে যান এ ব্যবসায়ী। এরপর তিনি কোথায় আছেন, কোথায়  গেছেন, কীভাবে নিখোঁজ হলেন, তা কেউ-ই বলতে পারছেন না। গতকাল পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। সন্ধানে হাওরাঞ্চলে চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  ব্যাপক অভিযান। এ বিষয়ে গতকাল বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া এ দলটিতে সৈয়দ জাহেরুর রহমান সাগর, তার বন্ধু এবং বন্ধুর পরিবারের সদস্য শিশু ও নারীসহ মোট ৫০ জন ছিলেন। সারা দিন নৌকায় হাওরে ঘুরে এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখার পর রাতে ঘাটে পৌঁছার পর ঢাকায় ফেরার জন্য অপেক্ষমান ট্যুরিস্ট বাসে উঠতে যাবেন, তখনই সবাই আবিষ্কার করেন জাহেরুর রহমান সাগর তাদের সঙ্গে নেই। বন্ধুরা তাকে খুঁজতে ট্রলারে ফিরে গিয়ে তার ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন পান, কিন্তু তাকে আর পান না। জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ভ্রমণ গন্তব্য হাওরাঞ্চলে ছুটির দিনগুলোতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হলেও এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসসাদিকজামান বিবিসিকে জানান, হাওর সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে এখন সমন্বিত অনুসন্ধান চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নৌ-পুলিশ পুরো এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। উনাদের ট্রলারটি অষ্টগ্রাম থেকে নিকলী আসার পথে উনি মিসিং হয়েছেন। এ পথে মেঘনা নদীও পড়ে। সবাই মিলে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ বেড়াতে যাওয়া বন্ধুদের একজন শেখ রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমরা নৌ-পুলিশ ও সাগরের কয়েকজন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে হাওরে আছি। পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।’ দলটির একজন বায়োজিদ সিকদার বলেন, ‘ট্রলারে একনাগাড়ে আড়াই ঘণ্টার মতো চলার পর আমরা প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে পৌঁছাই। সেখানে অল্প সময় অবস্থান করে আমরা আবার ট্রলারে করে অলওয়েদার সড়কের দিকে যাত্রা করি। ৬টার দিকে ১০ মিনিটের মতো সময় সেখানে কাটিয়ে আবার নিকলীর দিকে যাত্রা করি। পুরো পথে আমরা কেউ কোথাও পানিতে নামিনি।’

দলটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বহুল আলোচিত অলওয়েদার সড়কে তিন উপজেলার সংযোগকারী জায়গায় ছবি তোলা এবং পরে আবার ট্রলারে এসে আধ ঘণ্টা পর ট্রলার চলমান অবস্থায় মাগরিবের নামাজেও অংশ নিয়েছিলেন সৈয়দ জাহেরুর রহমান সাগর। মাগরিবের নামাজের পর হাওরে গভীর অন্ধকারে ট্রলারের এক অংশ থেকে অন্য অংশ ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না এবং মোবাইল ফোনের আলো জ্বাললে পোকামাকড় আসছিল দেখে অনেকে চুপচাপ হয়ে নিজের মতো সময় কাটাচ্ছিলেন। এশার নামাজের সময় অন্ধকারের কারণে কে কার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন তা আর কেউ তেমন একটা খেয়াল করেননি। ট্রলারটি সবাইকে নিয়ে নিকলী ঘাটে আসে রাত ৮টায় এবং ট্রলার থেকে সবাই যখন নামছিলেন তখন একজন একটি ব্যাগ আর জুতা পড়ে থাকতে দেখে সেগুলো নিয়েই ঘাটে অপেক্ষমাণ বাসে আসেন। বাস ছাড়ার মুহূর্তে সাগর ঢাকা থেকে আসার সময় যার পাশে বসেছিলেন তিনি দেখেন যে, আসনটি খালি এবং তিনি অন্যদের জানান যে সাগর এখনো বাসে ওঠেননি। এরপর কয়েকজন বন্ধু ট্রলার, ঘাট, দোকানপাটে খুঁজে সাগরকে না পাওয়ায় অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। আরেকটি বাস প্রায় ৩০ জনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসসাদিকজামান বলেন, হাওরে অলওয়েদার সড়ক হওয়ায় এখন ছুটির দিনে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন, কিন্তু কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।

সর্বশেষ খবর