বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে বাড়ছে চা চাষ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরে বাড়ছে চা চাষ

কৃষিনির্ভর দিনাজপুর জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ঝড়সহ প্রাকৃতিক তেমন দুর্যোগ নেই। মাটিও উর্বর। ধান-লিচুসহ ফসল উৎপাদনও বেশি। দেশের খাদ্য ঘাটতিতে যথেষ্ট অবদান রাখছে এ জেলা। এরপরও ধান-লিচু-ভুট্টার পাশাপাশি দিনাজপুরের সমতল ভূমিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে চা চাষ। পতিত জমি ছাড়াও অনেকে ধানের জমিতেও এ চা চাষ শুরু করেছেন। এ অঞ্চলের চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে শুরু করেছে।

স্বল্প সুদে ঋণ, প্রণোদনাসহ কারিগরি সহযোগিতা পেলে চা চাষ আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ের চা শ্রমিকরা অনুদান পেলেও দিনাজপুরের চা শ্রমিকরা তা পাননি। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষে অনুকূল হওয়ায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরেও চা চাষের পরিধি বেড়েই চলেছে। আগামীতে চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন; তৈরি হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

বীরগঞ্জের মনিরুল ইসলাম, নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন চা চাষি জানান, এ এলাকায় ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয়। চা বাগানে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়। বর্ষা মওসুমে বাগানে যেন পানি না জমে, সে জন্য গাছের গোড়া উঁচু করে দিতে হয়। চা গাছে ছায়া দিতে মাঝেমধ্যে লাগানো যেতে পারে পেয়ারা, নিম, আম ইত্যাদি গাছ। এ ছাড়া খরার সময় পানি দিয়ে গাছ সতেজ রাখতে হয়।

তবে লাল মাকড়সা ও মশা চা পাতা যেন না খেয়ে ফেলে, তার জন্য ওষুধ ছিটানো প্রয়োজন। প্রায় প্রতি মাসেই চা পাতা বিক্রি করা যায়। বছরে দুবার সার ব্যবহার করলেই চলে। এসব বাগান থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত চা পাতা তোলা যাবে। বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ির বাঙালিপাড়ার মনিরুল ইসলাম সবজি চাষের জমিতে ২০১৯ সালে এক একর জমিতে চা চাষ শুরু করেন। প্রথমে ৬ হাজার চারা রোপণ করেন।

প্রথম অবস্থায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। শুধু বাগানে যত্ন ও তদারকি করতে হয়। জানুয়ারিতে প্রথমবার ৮৫ কেজি চা পাতা তুললেও এখন তা অনেক বেড়েছে। এরই মধ্যে পাঁচবার তোলা হয়েছে। ৩০ আগস্ট ২৬০০ কেজি চা পাতা ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের দিনাজপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সাইদুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর অঞ্চলে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় সরকার দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী অঞ্চলে চা চাষ সম্প্রসারণে নদপ্রণ বাংলাদেশ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভর্তুকি দিয়ে উন্নত বিটি-২ জাতের মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে প্রতিটি চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া কারিগরি সহযোগিতাও দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ৩০ জুন এ প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। দিনাজপুর অঞ্চলের বীরগঞ্জ, কাহারোল ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৬২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। তবে এর বাইরেও চাষ হচ্ছে এবং এর আওতায় আনা হবে। এ পর্যন্ত ২০ জন চাষি রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর