মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

খয়রা কাস্তেচরা বিরল পরিযায়ী

আলম শাইন

খয়রা কাস্তেচরা বিরল পরিযায়ী

বিরল পরিযায়ী ‘খয়রা কাস্তেচরা’। দেশে কালেভদ্রে দেখা মেলে। এই প্রজাতির বিস্তৃতি উত্তর-দক্ষিণ-মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া পর্যন্ত। বাংলাদেশে প্রচন্ড শীতে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। তবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসে না। আকৃতিতে বেশ বড়। দেখতেও চমৎকার। ভারিক্কি চলন-বলন। স্বভাবে শান্ত। কণ্ঠস্বর কর্কশ। সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলের মিঠা পানির অগভীর জলাশয়ে কিংবা মোহনাতে বিচরণ করে। বিশেষ করে জলজ উদ্ভিদ অথবা কৃষি জমিতে একাকী কিংবা জোড়া বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। ঘন উদ্ভিদ-সমৃদ্ধ জলাশয় এড়িয়ে চলে। স্যাঁতস্যাঁতে তৃণভূমিতেও শিকার খোঁজে। তবে হাঁটু জলের বেশি নামে না। এরা ঝাঁক বেঁধেও বিচরণ করে। রাতে অন্যসব পাখির সঙ্গে একই গাছে বিশ্রাম নেয় ঝাঁক বেঁধে। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে কৃষি জমিতে অধিক কীটনাশকের ব্যবহার এবং এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে প্রজাতিটি হুমকির মুখে রয়েছে। সব মিলিয়ে বিবেচনা করে প্রজাতিটিকে আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম : ‘খয়রা কাস্তেচরা’, ইংরেজি নাম : ‘গ্লসি ইবিস’, (Glossy Ibis) এরা ‘চকচকে দোচরা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটির গড় দৈর্ঘ্য ৪৮-৬৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৮৫-৫৮০ গ্রাম। মাথা গাঢ় বাদামি। মুখাবয়ব কালো। ঘাড় থেকে পিঠের মাঝ বরাবর লালচে-খয়েরি। ডানা ও লেজ চকচকে বেগুনি-সবুজ। যা থেকে উজ্জ্বল আভা বের হয় প্রতিনিয়ত। লেজ খাটো। দেহতল লালচে-খয়েরি। প্রজনন পালক ভিন্ন। হলদে-বাদামি ঠোঁটটি নিচের দিকে কাস্তের মতো বাঁকানো। লম্বা পা লালচে-বাদামি। চোখের দুই পাশে দুটি তির্যক নীলাভ টান ঠোঁটের গোড়ায় মিলিত হয়েছে। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রঙে সামান্য তফাৎ রয়েছে। ওদের ঘাড়ের ওপরে বেশ কিছু সাদা রেখা, গলা সাদাটে ও পা কালচে দেখায়। প্রধান খাবার : শূককীট, কেঁচো, ছোট সাপ, টিকটিকিসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ এবং মাঝে-মধ্যে মাছও শিকার করে। এ ছাড়াও মৌসুমভেদে খাদ্যাভাস পরিবর্তনশীল। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের দেখা যায়। যেমন : অস্ট্রেলিয়ায় ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালে (সাত মিটারের মধ্যে) সরু কাঠি বা ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২৩ দিন।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক

সর্বশেষ খবর