আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসাকে সব কিছু, এমনকি নিজের জীবনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া ঈমানের দাবি।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফয়সালা দানকারী হিসেবে মেনে নেবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফয়সালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনো ধরনের দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৫)
আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রা.) বলেন, একবার আমরা নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, যখন তিনি উমর-এর হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন।
এ সময় উমর তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই আপনি আমার কাছে সব কিছুর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয়—আমার নিজের জীবন ছাড়া। তখন রাসুল (সা.) বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে প্রিয়তর হব তোমার জীবনের চাইতে। তখন উমর তাঁকে বলেন, এখন আল্লাহর কসম! অবশ্যই আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চাইতে প্রিয়তর। তখন নবী করিম (সা.) বলেন, হ্যাঁ, এখন হে উমর! (বুখারি, হাদিস : ৬৬৩২)
এখানে নিজের জীবনের কথা বলা হয়েছে, মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকে।
কিন্তু পরকালীন সফলতার দৃষ্টিতে দ্বিন ও আদর্শের স্থান দুনিয়ার সব কিছুর ওপর। সেটা বুঝতে পেরেই উমর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসাকে নিজের জীবনের চেয়ে উচ্চে স্থান দেন। আর তখনই রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ঈমানের পূর্ণতার স্বীকৃতি দেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার মধ্যে তিনটি বস্তু আছে, সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে।
যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সব কিছুর চেয়ে প্রিয়তর। যে ব্যক্তি কাউকে স্রেফ আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং যে ব্যক্তি কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে—যা থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন, যেভাবে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (বুখারি, হাদিস : ১৬)
আবু উমামা বাহেলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য (কাউকে) ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা করে এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করে এবং আল্লাহর জন্যই দান করা থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তি তার ঈমানকে পূর্ণ করল।’
(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে লেখেন, ‘সেটা এমন বিষয়, যা নিয়ে বিতর্ককারীরা বিতর্ক করে, জ্ঞানীরা তা অনুসন্ধান করে, অগ্রগামীরা তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়, প্রেমিকরা তাতে আত্মোৎসর্গ করে, তার স্নিগ্ধতায় আবেদরা সজীবতা লাভ করে। আল্লাহর ভালোবাসায় অন্তরের শক্তি, আত্মার খোরাক ও চোখের প্রশান্তি।
সেটা এমন জীবনীশক্তি, যা থেকে যে বঞ্চিত হয় সে যেন প্রকৃতার্থেই মৃত, এমন আলো যে তা হারিয়ে ফেলে সে যেন সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত, এমন আরোগ্য যে তা হারিয়ে ফেলে তার অন্তরে বাসা বাঁধে সব ব্যাধি, এমন স্বাদ সে তা আস্বাদন করেনি তার জীবন ব্যথায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর ভালোবাসাই ঈমান ও আমলের প্রাণসত্তা।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ৩/৮)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন