বাসস্থান মহান আল্লাহর দেওয়া অমূল্য নিয়ামত। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য মতে, পৃথিবীতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫০ মিলিয়ন, যা বিশ্ব জনসংখ্যার দুই ভাগ। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বাংলাদেশেও গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় লাখ। তাই মহান আল্লাহ যাদের মাথা গোঁজার একটু ব্যবস্থা করেছেন, তাদের উচিত মহান আল্লাহর এই বিশাল নিয়ামতের শোকর আদায় করা।
নফল ইবাদত, জিকির ও তিলাওয়াতের মাধ্যমে ঘরকে আবাদ রাখা। কেননা যেসব ঘরে নফল ইবাদত হয় না, মহানবী (সা.) সেই ঘরগুলোকে কবরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোতেও কিছু সালাত আদায় করো, সেগুলোকে কবর বানিয়ো না।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৩২)
এখানে মূলত মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের নফলের প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি মহান আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে ঘরকে আবাদ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। ঘরগুলো যাতে নামাজবিহীন হয়ে কবরের মতো না হয়ে যায়। কারণ কবরস্থানে নামাজ আদায় হয় না।
এ জন্য নফল নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ঘরে আদায়ের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম সালাত হলো ঘরে আদায়কৃত সালাত, তবে ফরজ নামাজ ছাড়া।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩১)
অর্থাৎ, নফল নামাজ মসজিদের চেয়ে ঘরে আদায় করলে এর সওয়াব ও প্রতিদান বেশি।
ঘরে আদায়কৃত নফল নামাজের ধরণ
শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তিনি দোয়া দিয়ে নামাজ শুরু করতেন : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরাঈল ও মিকাঈল ও ইসরাফিল।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬৯৬)
বিতর নামাজ : উমর (রা.) বলতেন, তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামাজ হিসেবে আদায় করো। কেননা মহানবী (সা.) এ নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৭২)
ঘুম থেকে জাগ্রত হলে নামাজ : হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি রাতে জেগে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করে, অজু করে নামাজ পড়ে, তার নামাজ কবুল হয় এবং তার দোয়া কবুল হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৭৬)
অনেকের মতে, এই নামাজ আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া, যিনি তাকে মৃত্যুর পর আবার জীবন দিয়েছেন, সুস্থ দেহে এবং সুস্থ বুদ্ধিতে জাগ্রত করেছেন। এটি একটি নতুন জীবনের সূচনা এবং অতীতের গুনাহ থেকে তাওবার সুযোগ।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত : মহানবী (সা.) ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ ঘরে আদায় করতেন বলে হাদিসে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজ এত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন যে আমি বলতাম, তিনি (সা.) কি নামাজের দুই রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়েছেন? (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৯)
যেহেতু এই নামাজ মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সামনে পড়েছেন, তাই বলা যায় যে তিনি ফজরের সুন্নত ঘরে আদায় করতেন।
দুহা (চাশতের) নামাজ : বুরাইদাহ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওই প্রত্যেক গ্রন্থির তরফ থেকে দেয় সদকা রয়েছে। সবাই বলল, ‘এত সদকা দিতে আর কে সক্ষম হবে, হে আল্লাহর রাসুল?’ তিনি বললেন, মসজিদ থেকে কফ (ইত্যাদি নোংরা) দূর করা, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা-পাথর প্রভৃতি) দূর করা এক একটা সদকা। যদি তাতে সক্ষম না হও, তবে দুই রাকাত চাশতের নামাজ তোমার সে প্রয়োজন পূর্ণ করবে। (মুসনাদে আহমদ)
জোহরের আগে চার রাকাত : রাসুল (সা.) পশ্চিমে সূর্য হেলে যাওয়ার পর জোহরের আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। বলতেন, ‘এটা এমন সময় যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, এই সময়ে আমার একটি নেক আমল উত্থিত হোক তা আমি ভালোবাসি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৭৮)
এভাবে আসরের আগের চার রাকাত নফল, মাগরিব ও এশার সুন্নত-নফলগুলোও ঘরে আদায় করা উত্তম। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত নিজেদের ঘরগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ করা এবং মহান আল্লাহ শোকর আদায় করা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই