সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী

ছবিতে ছবিতে উন্নয়ন

গণমানুষের উন্নয়নই শেখ হাসিনার দর্শন -স্পিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবিতে ছবিতে উন্নয়ন

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস নবীন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাঁর দর্শন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দর্শন। গণতন্ত্র ও গণমানুষের সমর্থনের প্রতি অগাধ বিশ্বাসই প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। 

গতকাল সকালে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের শেরাটন ঢাকা হোটেলে ‘বাংলাদেশ : উন্নয়নের এক যুগ’ শিরোনামে তিন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। গতকাল সকালে শুরু হওয়া এ চিত্র প্রদর্শনী আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

প্রদর্শনীতে রয়েছে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত এক যুগের উন্নয়ন কর্মকান্ড, বৈশ্বিক অঙ্গনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকচিত্র। শেখ হাসিনার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের দুর্লভ ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীতে। এতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা, ছাত্র রাজনীতি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে তাঁর দেশে ফিরে আসা, গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের জন্য সংগ্রাম, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন, স্বীকৃতি ও সম্মাননা এবং পুরস্কারের দুর্লভ ছবি রয়েছে। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের এমডি ও সিইও এহসান খসরু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূর আলী ও ইউনিক গ্রুপের চেয়ারপারসন সেলিনা আলী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনা এবং এর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতির কথা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যখন লিখতে হয় বা বলতে হয়, আমি বিশ্বাস করি ১৯৮১ সালের ১৭ মে তারিখটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট। কারণ সেই দিন প্রধানমন্ত্রী, তখনকার শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়ে স্বজনহারা বেদনায় ফিরে এসেছিলেন। সেদিন ‘ঝড়-বৃষ্টির আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’ এমন স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল বাংলার মাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সেটি সত্যিই বিস্ময়কর মন্তব্য করে স্পিকার বলেন, বিশ্বনেতারাও সমস্বরে বলছেন, এটি একটি উন্নয়ন বিস্ময়। বিশ্বের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আমাদের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন নেতা আছেন বলেই আজকে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি সেতু নির্মাণ করতে পেরেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর নেতৃত্বে পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ; তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দর্শন। প্রদর্শনীর আলোকচিত্র সম্পর্কে স্পিকার বলেন, এখানে লক্ষ্য করে দেখেছি, চিত্রগুলো বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম; বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, ভাই-বোনদের মাঝে তাঁর বেড়ে ওঠা; শিক্ষাজীবন; সাংসারিক জীবন; পারিবারিক জীবন; সন্তানদের ছবি এখানে আছে। এরপর তিনি কীভাবে রাজনীতিতে এলেন, কীভাবে বাংলাদেশের হাল ধরলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তার সব কিছুই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা এখানে আসবেন তারা অনেক নতুন তথ্য পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি, একটা জায়গাতে তাঁর খুব পাওয়ারফুল একটি স্টেটমেন্ট আছে। সম্ভবত ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এই সংসদ জনতার সংসদ’। এই যে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস, মানুষের শক্তির প্রতি যে বিশ্বাস, মানুষের সমর্থনের প্রতি যে বিশ্বাস, সেটি তার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখনো তাঁর বক্তব্যে সেটির সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখেছি। আজ তিনি চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, তাঁর যে ভিত, সেটা তিনি অনেক কষ্টে রচনা করেছেন। অনেক দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে এই অবস্থানটি তাঁকে নিজের জন্য তৈরি করতে হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য তৈরি করতে হয়েছে।  স্পিকার তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে রবিঠাকুরকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়। তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।’ বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের কান্ডারি। উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। প্রধানমন্ত্রীর মেধা, প্রজ্ঞা, মনন ও একাগ্রতায় বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এসডিজি অর্জনে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করে চলছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের রোল মডেল। সারা বিশ্বে তিনি এখন অনুকরণীয় রাষ্ট্রনায়ক ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় নয়, তিনি বিশ্বের মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় অবিরাম সংগ্রাম করে চলেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তিনি বলেন, এই আয়োজন করতে আমাদের এক বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে। আসলে গত ১২ বছরে দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে যে, মানুষ তাঁর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংগ্রামী জীবনের কথা ভুলে গেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করতে। অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন বলেন, এই আয়োজনে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই প্রদর্শনী থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আমাদের প্রজন্ম কেন যেন বুঝে উঠতে পারেনি যে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য কত বড় গিফট। আজ থেকে ১০০ বছর পর যে প্রজন্ম আসবে, তারা যখন পেছনে তাকাবে, তখন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে তারা মূল্যায়ন করতে পারবে। আমি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে যাই তখন আব্রাহাম লিংকনের বিশাল স্ট্যাচুর সামনে দাঁড়াই। আমার কেন যেন মনে হয়, জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকাকে স্বাধীন করেছেন কিন্তু আমেরিকা যখন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল, আব্রাহাম লিংকন তখন তাকে আটকে ধরে ঠিক করেন। বাংলার রাজনীতিতে শেখ হাসিনা হলেন সেই আব্রাহাম লিংকন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নদর্শন তরুণদের সামনে তুলে ধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই এ আয়োজন বলে জানিয়েছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর