মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সাভারে খুন মোংলায় পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার সাভারে পারুল বেগম খুনের পরিকল্পনা হয় বাগেরহাটের মোংলায়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিলর প্রার্থী হালিম হাওলাদার খুনের ছক কষেন। প্রতিপক্ষ বিল্লাল সরদারকে খুনের মামলায় ফাঁসাতে পারলে সহজেই জিতবেন এ ছিল তার ভাবনা। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাভারের বক্তারপুরের এ খুনের পরিকল্পনা হয় বাগেরহাটের মোংলার চিলায় বসে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হালিম হাওলাদার ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন পিরোজপুরের জামাল হাওলাদারের সঙ্গে। জামাল আবার জোট বাঁধেন দরজি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে। খুনের জন্য তাদের পছন্দ ছিল এমন কেউ, যার মৃত্যুতে কোনো চাঞ্চল্য হবে না বা কেউ তদবির করবে না।

সংবাদ সম্মেলনে একটি অডিও ক্লিপ শোনানো হয়। ওই ক্লিপে বলতে শোনা যায়, ‘বিল্লাল যদি গ্রেফতার না হয়, প্রথমে একজন রিকশাওয়ালা মারব, তাতেও না হলে আরেকজন মহিলা মারব।’ বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক ভাড়াটে খুনি জামালকে দিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকায় সাভারের বক্তারপুরে ফেরি করে কাপড় বিক্রেতা পারুল বেগমকে (৪৫) হত্যা করান হালিম হাওলাদার। খুনের কয়েক দিন আগে পারুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন খুনি জামাল। পারুলের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় ছিল না হত্যার পরিকল্পনাকারী হালিম হাওলাদারের। নিহত পারুলের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীর সিন্দুরকোটা মটমোড়া এলাকায়। শুধু তা-ই নয়, ক্লুলেস ওই হত্যাকান্ডে ভাড়াটে খুনিও জানতেন না কাকে খুন করতে হবে। খুনের শিকার নারীও জানেননি কেন খুন করা হলো তাকে। নিছক নির্বাচনী মাঠের কালো ঘুঁটির একটিমাত্র চালে প্রাণ হারান নিরপরাধ পারুল বেগম।

তিনি বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকান্ড হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা নিজ উদ্যোগে মামলাটির তদন্ত অধিগ্রহণ করে। মামলাটি তদন্তকালে একটি এনআইডি কার্ডের সূত্র ধরে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মূল ঘাতক জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজ্জামানকে (৫০) গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে এবং পরদিন হত্যার পরিকল্পনার সহযোগী দর্জি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজকে (৪৬) মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সর্বশেষ রবিবার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হালিম হাওলাদারকে (৫২) বাগেরহাটের মোংলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হালিম হাওলাদারের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশ্চিম মচিলা এলাকায়। বাবার নাম হামিদ হাওলাদার। তিনি মোংলা থানার ৬ নম্বর চিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল সরদারকে একটি হত্যাকান্ডে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকান্ডের আনুমানিক ২০ দিন আগে হালিম মেম্বার ঘাতক জামালের সঙ্গে মোংলায় দেখা করেন। ৩০ হাজার টাকায় একটি লাশ ফেলার চুক্তি হয়। অগ্রিম দেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা। শর্ত থাকে যে, প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল সরদারের এনআইডির ফটোকপি ফেলে যেতে হবে হত্যাকান্ডের স্থানে। সে জন্য হালিম নিজেই বিল্লালের এনআইডি কপি সংগ্রহ করে খুনি জামালের হাতে দেন। জামাল তার বন্ধু দর্জি মাস্টার মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কথামতো পূর্বপরিচিত ও কথিত বান্ধবী পারুল বেগমকে টার্গেট করেন জামাল। পারুল বেগম বাচ্চাদের জামাকাপড় তৈরি করে নিজেই ফেরি করে বিক্রি করতেন। পারুল বেগমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখান ঘাতক জামাল। এরপর সাভারের বক্তারপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিতে তাকে প্রলুব্ধ করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৭ সেপ্টেম্বর বক্তারপুর নামাবাজার এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ওঠেন। পরিকল্পনামতো ওই রাতেই পারুল বেগমকে ভাড়াটে খুনি জামাল হাওলাদার গলায় জলপাই রঙের ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশের পাশে বিল্লাল সরদারের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে যান। এনআইডির সূত্র ধরে পিবিআইর তদন্ত দল বিল্লাল সরদারকে খুঁজে পায় এবং তার ব্যাপারে তদন্ত করে নিশ্চিত হয় যে তিনি হত্যাকান্ডে জড়িত নন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্ত দল জানতে চায়, তার কোনো শত্রু রয়েছে কি না, যে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে? তখন তিনি তার প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থী হালিম হাওলাদারসহ কয়েকজনের নাম জানান। তদন্ত দল জানতে পারে, এ হত্যার আগে-পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির খুব ঘন ঘন যোগাযোগ হয়। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ঘাতক জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজ্জামানের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার জামালের ছবি সাভারে ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারকে দেখালে তিনি শনাক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর