রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ল্যাপটপ কিনতে শিশু অপহরণ হত্যা ময়লার স্তূপে লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নরসিংদীর রায়পুরায় মুক্তিপণের টাকায় গেমিং ল্যাপটপ কিনতে শিশু ইয়ামিনকে (৮) অপহরণ শেষে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান এ তথ্য জানান।

এর আগে শুক্রবার রাতে রায়পুরার উত্তর বাখরনগর ও পিরিজকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উত্তর বাখরনগর গ্রামের সিয়াম উদ্দিন (১৯), সুজন মিয়া (২৪), কাঞ্চন মিয়া (৫৪) ও পিরিজকন্দি গ্রামের রাসেল মিয়া (১৮)। জানা গেছে, ইয়ামিন একই গ্রামের মালয়েশিয়া-প্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে ও বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ময়লার স্তূপ থেকে আনুমানিক আট মাস বয়সী এক মেয়েশিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার হয়। শাহবাগ থানার এসআই রয়েল বলেন, ‘আমরা জরুরি সেবার ট্রিপল নাইনে খবর পেয়ে ঢামেক হাসপাতালের ময়লার স্তূপ থেকে পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো শিশুটির লাশ উদ্ধার করি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ নরসিংদী জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২৮ নভেম্বর সকালে ইয়ামিনের মা শামসুন্নাহার বেগম ইউপি নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার সময় ছেলেকে বাড়ি রেখে যান। দুপুরে ফেরার পর থেকে ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়- ইয়ামিন তাদের হেফাজতে আছে। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না পেলে তাকে হত্যা করা হবে। শিশুটির মা এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে অপহরণকারীরা ৫ লাখে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরে বিকাশে ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় বুধবার রাতে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় অপহরণ মামলা করেন ইয়ামিনের মা। এর পরই ইয়ামিনের সন্ধানে নামে পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালের দিকে বাখরনগর গ্রামের ডোবা থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়, যা ইয়ামিনের বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।

পুলিশ আরও জানায়, লাশ উদ্ধারের পর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার রাতে বাখরনগর গ্রাম থেকে সিয়াম ও পিরিজকান্দি গ্রাম থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত স্কচটেপ, বালিশ, অপহরণে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট ও সিম।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, গেমিং ল্যাপটপ কিনে ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জনের জন্য ইয়ামিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়। রবিবার ভোটের দিন তারা দুজন খেলার ছলে ইয়ামিনকে সিয়ামের বাড়ির নির্জন কক্ষে নিয়ে সেখানে তাকে মুখ, হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে রাখেন।

পরে তারা সিআইডি ও ক্রাইম প্যাট্রল থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অ্যাপস ব্যবহার করে ভিপিএনের মাধ্যমে ইয়ামিনের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণের দিনই সিয়াম ও রাসেল বালিশচাপা দিয়ে ইয়ামিনকে হত্যা করেন। পরে লাশ বস্তায় ভরে গোয়ালঘরে রাখেন এবং ঘটনার চার দিন পর তা ডোবায় ফেলে আসেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর বাখরনগর থেকে সুজন ও কাঞ্চনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘আমরা লাশ উদ্ধারের পরই অভিযানে নেমেছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সিয়াম ও রাসেল হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর