শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

ধানের পূর্ণাঙ্গ জিন রহস্য উন্মোচন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন, ময়মনসিংহ থেকে

ধানের পূর্ণাঙ্গ জিন রহস্য উন্মোচন

বাংলাদেশে এ প্রথম লবণাক্ত ও জলমগ্ন সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। গতকাল ময়মনসিংহে বিনার মিলনায়তনে  এক অনুষ্ঠানে এই জিনোম উন্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই আবিষ্কারের ফলে কৃষকের উৎপাদন ও আয় বাড়বে। আমাদের ধানের ঘাটতি পূরণ হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আকস্মিক বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কার্যকরী উপায় হচ্ছে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন।  মন্ত্রী বলেন,  এর ফলে আলোক শক্তি (রেডিয়েশন) ব্যবহার করে লবণাক্ত সহিষ্ণু ও বন্যা সহিষ্ণু ধানের আবহাওয়া উপযোগী  জাত উন্নয়ন, চালের স্বাদ ও পুষ্টি গুণ পরিবর্তন, পোকামাকড় প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।  এতে দেশের লবণাক্ততার কারণে পতিত জমি আবাদের আওতায় আসবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) থেকে সংগৃহীত ধানের বিভিন্ন অ্যাডভান্স লাইন থেকে নানাবিধ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ব্রিডিং লাইন আরসি-২৫১ শনাক্ত করে। বিনা এ ধানকে একদিকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাসমূহের আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য জাত হিসেবে (বিনাধান-২৩) ছাড়করণের লক্ষ্যে নানামুখী গবেষণা পরিচালনা করেছে, অন্যদিকে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে আরোপিত মিউটেশনের মাধ্যমে এ ধানের উন্নয়নের চেষ্টা করছে।

এ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ৬ জেনারেশনে ৩টি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষা উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, লবণাক্ততা ও ১৫ দিন জলমগ্নতা সহিষ্ণু।

বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই তার প্রতিষ্ঠানটি মিউটেশনের মাধ্যমে ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন করেছে। বিভিন্ন গবেষণায় মিউটেশনের প্রভাবে ফসলের ফেনোটাইপের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন দেখে উন্নত জাত শনাক্ত করা হতো; কিন্তু জিনোমের কোথায় ডিএনএ বিন্যাসের পরিবর্তনের জন্য এমন কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হলো তার ব্যাখ্যা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে তার  নেতৃত্বে কয়েকজন বিজ্ঞানী এই গবেষণায় প্যারেন্ট ধান ও সেখান থেকে জন্ম নেওয়া কয়েক লাখ চারা থেকে মাত্র তিনটি ধানের চারা বেছে নিয়ে মিউট্যান্ট ধানের জিন রহস্য সম্পন্ন করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম।

এই গবেষণায় অংশ নেন বিনার মহাপরিচালক ছাড়াও বাকৃবির পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বজলুর রহমান, বায়ো টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মো. শহিদুল ইসলাম, বিনার প্লান্ট ব্রিডিং ডিভিশনের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সামছুন্নাহার বেগম, বায়ো টেকনোলজি বিভাগের পিএইচডি ফেলো মানস কান্তি সাহা।

সর্বশেষ খবর