বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় হত্যা

ঢাবি শিক্ষিকা খুনে স্বীকারোক্তি আনারুলের

গাজীপুর প্রতিনিধি

টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় হত্যা

সাইদা গাফ্ফার

টাকাই কাল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফারের। সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন নির্মাণশ্রমিক আনারুল ইসলাম। গতকাল বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিয়াজ মাখদুমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফারকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন আনারুল। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদিন তাকে আদালতে হাজির করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।

জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান জানান, তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজির করলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আনারুল। জবানবন্দি প্রদানকালে সে অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফারকে হত্যার কথা স্বীকার করে। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফার গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভিতর নিজ প্লটে বাড়ি নির্মাণ কাজ তদারকি করতেন। ওই প্লটের চারটি গাছ কাটার জন্য দায়িত্ব দেন বাড়ির রাজমিস্ত্রির হেলপার আনারুলকে। গাছ কাটার কাজ শেষে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পাশের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফার। তার সঙ্গে ছিল আনারুল। নির্জন পথে কিছুদূর যাওয়ার পর অধ্যাপক সাইদা ব্যাগ থেকে মজুরি বাবদ ৩০০ টাকা দেন আনারুলকে। তখন ওই পার্টসে আরও টাকা দেখতে পায় সে। লোভ সামলাতে না পেরে আনারুল অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফারের কাছ থেকে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাগটি গলায় আটকে গেলে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অধ্যাপক সাইদা চিৎকার দিলে তাঁর মুখ চেপে ধরে আনারুল। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আনারুলের হাতে কামড় দেন। পরে অধ্যাপক সাইদাকে মাটিতে ফেলে নাক-মুখ ও গলা চেপে ধরে আনারুল। একপর্যায়ে অধ্যাপক সাইদার গায়ে থাকা চাদর দিয়েই তাঁর গলা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাখে আনারুল। তাঁর দেহ নিস্তেজ হলে পা ধরে টেনে আবাসিক প্লটের ঝোপের ভিতর ফেলে রাখে। পরে তাঁর ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোনসহ ভাড়া বাসার চাবি নিয়ে নেয়। নিহতের স্যান্ডেল ও ব্যাগ ঝোপের ভিতর ফেলে দেয় এবং মোবাইল ফোন মাটিতে পুঁতে রাখে। অন্য বাটন মোবাইল ও চাবি নিয়ে ভাড়া বাসায় যায় আনারুল। ওই বাসায় ঢুকে আরও টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের জন্য আলমারি খুলে তছনছ করে। কিছু না পেয়ে আলমারি ও বাসার দরজা খোলা রেখে রাতেই গাইবান্ধায় শ্বশুরবাড়ি পালিয়ে যায়। পরদিন সেখান থেকে নিজ বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। হত্যার এ ঘটনা একাই ঘটিয়েছে বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে আনারুল। এর আগে গতকাল অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফারকে হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি আনারুল ইসলামকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিএমপির কাশিমপুর থানার এসআই দীপংকর রায়। আনারুল গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলার বুর্জুগ জামালপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে।

সর্বশেষ খবর