বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তরুণ সাংবাদিক হাবীব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তরুণ সাংবাদিক হাবীব

রাজধানীর হাতিরঝিলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সময়ের আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তরুণ সাংবাদিক হাবীবুর রহমান (৩৫) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ী প্রান্তের সিদ্দিক মাস্টারের ঢালের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে এক পথচারী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গতকাল ঢাকায় তিন দফা, গ্রামের বাড়িতে এক দফা জানাজা শেষে  সেখানে লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি স্ত্রী, ৩১ মাস বয়সী এক ছেলে, পিতা-মাতা, এক ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ছাত্রাবস্থায় হাবীবুর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাবিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন।  

তার পৃথক পৃথক জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার কবির, দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল, রাহাত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, শাহেদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, মুরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাজ্জাদ আলম খান তপু, রাজু আহমেদ, সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, কবির আহমেদ খান ও মসিউর রহমান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন ও হাসান জাহিদ তুষার, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মু. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু ও এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এবং সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রথমেই ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের নেতৃত্বে হাবীবুর রহমানের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে কার্যনির্বাহী কমিটি। ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ক্র্যাবের সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকুর নেতৃত্বে ক্র্যাব, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং ও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তার মৃত্যুতে ডিআরইউর পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

বিভিন্ন মহলের শোক : উদীয়মান সাংবাদিক হাবীবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম এনামুল হক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রমজানুল হক নিহাদ প্রমুখ। 

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোররাত থেকেই তরুণ সাংবাদিক হাবীবের বাড়িতে শোকের মাতম শুরু হয়। হাবীব কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের মানরা গ্রামের পেয়ার মিয়ার ছেলে। তিন মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে সবার বড় হাবীব। ভাতিজাকে হারিয়ে কান্না করছিলেন চাচা মো. ইউনুস। বুক চাপড়িয়ে বলছিলেন আমার ছেলে। আমাকে ছোট বাবা ডাকত। আমার হাতেই বড় হয়ে উঠেছে। আমি কেমনে থাকব আমার ছেলেরে ছাড়া। আমার ছেলেটা কেমনে থাকব কবরে। আমার ভাই পেয়ার মিয়ার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। আমাদের পরিবারের প্রথম ছেলে। কত আদর-সোহাগে বড় করেছি। আমি গাড়ি চালাতাম ঢাকায়। ২০০৬ সালে আমারে বলছিল বাবা আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হব। আমি টাকা দিলাম। আমার ছেলেটা বংশের মুখ উজ্জ্বল করে আজ কই গেল। হাবীবের বাবা পিয়ার মিয়া বুক চাপড়ে কান্না করেন আর বলেন, আমার পুত নাই। কই গেলিরে হাবীব, তুই কই গেলি।

রাত ৯টায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এলাকার সহস্রাধিক মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর