রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অভিযান-১০ নিয়ে নাগরিক তদন্ত কমিটির ২৫ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শুধু মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারকে শাস্তি না দিয়ে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনাসহ ২৫ দফা সুপারিশ জানিয়েছে নাগরিক তদন্ত কমিটি। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ আইন প্রণয়ন, টাকার পরিমাণ নির্ধারণ এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী (নৌযান মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার, সরকারি কর্মকর্তা) ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করারও সুপারিশ করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক তদন্ত কমিটি। নাগরিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। কমিটির সদস্য সচিব ও নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুলের সঞ্চালনায় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এবং নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নাগরিক কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য নৌ প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ ও সদস্য জাকির হোসেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনসহ ১৬টি সামাজিক সংগঠন গত ৪ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯ সদস্যের এই নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা দেশে কোনো নৌ দুর্ঘটনার পর এবারই প্রথম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবকাঠামো ও কারিগরি বিষয়ে সার্বিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চলাচলের যোগ্য মর্মে মতামত দেওয়ায় ও দীর্ঘদিন বন্ধের পর পুনরায় চলাচলের সময় লঞ্চটি পরীক্ষা না করায় নৌ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জরিপকারক এবং যাত্রার প্রাক্কালে লঞ্চটি পরিদর্শন না করে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়টি না জানিয়ে একই সংস্থার পরিদর্শক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো হচ্ছে- প্রত্যেক যাত্রীবাহী নৌযানে আনসার-সিকিউরিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা, যাত্রীবাহী লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষ, প্রবেশপথ, মাস্টারব্রিজসহ স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, যে কোনো নৌযানের নকশায় অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত করা, সে অনুযায়ী নকশা অনুমোদন এবং যথাযথভাবে নকশা অনুসরণ করে নৌযান নির্মাণ করা, নতুন নৌযানে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রতি তিন মাস পর পর তা পরীক্ষা করা। এছাড়া চলমান নৌযানগুলো বিশেষ করে লঞ্চ ও অন্যান্য যাত্রীবাহী নৌযানের অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা, লঞ্চের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করা, ইঞ্জিনকক্ষের পাশ থেকে খাবারের হোটেল সরিয়ে নেওয়া এবং ইঞ্জিনকক্ষ ও ক্যান্টিনের আশেপাশে জ্বালানি তেলসহ কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, নৌযানের ইঞ্জিনকক্ষে আগুন লাগলে তা দ্রুত নেভানোর জন্য স্থায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড সরবরাহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর