মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

নিম্নচাপের প্রভাবে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি, তলিয়ে অনেক এলাকা

প্রতিদিন ডেস্ক

উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

খুলনায় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন এলাকাবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অনেক এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আবার কোথাও ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তবে পটুয়াখালীতে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে যাচ্ছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে খুলনার উপকূলীয় এলাকার ৪৫টি পয়েন্টে প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। গতকাল খুলনার পাইকগাছার মাহমুদকাটি ও রামনাথপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর আগে রবিবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে সোলাদানা ইউনিয়নের পাউবোর ২৩ নম্বর পোল্ডারের বয়ারঝাঁপা এলাকায় ৩০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ভেসে যায় ছোট-বড় অনেক মৎস্য ঘের। পানির তোড়ে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ছাড়া কয়রার দক্ষিণ বেতকাশির চরামুখায় রিংবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়রা দক্ষিণ বেতকাশির স্থানীয় ইউপি সদস্য ওসমান গনি সরদার জানান, গতকাল দুপুরে চরামুখা খালের এক পাশে রাস্তা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। রাস্তাটি দীর্ঘদিন নাজুক অবস্থায় ছিল। এতে জোয়ারের পানি গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে। দক্ষিণ বেতকাশি, পাতাখালী, ঘড়িলাল মধ্যপাড়া গ্রামে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, দক্ষিণ বেতকাশি চরামুখা, মেদেরচর, আংটিহারা, জোড়সিং, হরিহরপুর, গাতিরগেড়ি, শাকবাড়িয়াসহ ২০-২৫টি পয়েন্টে ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চরামুখায় রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও দাকোপে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। এর মধ্যে আন্ধারমানিক ও সোলাদানা পয়েন্টে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ স্থানেই বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

বাগেরহাট : জেলার সব নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাগেরহাট শহর, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনটি পৌসভাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। মোরেলগঞ্জ বাজারসহ ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানাঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে হু-হু করে পানি ঢুকছে। অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। বনের সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও ৪ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের প্রাণীরা এখনো নিরাপদে রয়েছে। পর্যটকসহ সব ধরনের বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানির তোড়ে সুন্দরবনের বাঘ-হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ভাগ্যে কী ঘটেছে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে জানা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় শনিবার রাত থেকে সাগরে ফের ইলিশ আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। ৩ নম্বর সংকেতের মধ্যে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে রবিবার ভোর থেকে কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের ছোট নদী-খাল ও বাগেরহাটের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী : নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অর্ধশত চরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে আজ পানির চাপ কিছুটা কমেছে। দিনভর বৃষ্টিপাত হয়নি। তাই জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত এক সপ্তাহ পর মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুরসহ সব মৎস্য বন্দর ও মাছ ঘাটের শত শত ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে রওনা হয়েছে।

বরগুনা : জোয়ারের পানিতে বরগুনা পৌর শহরের নিচু রাস্তাঘাট তলিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। একই অবস্থা আমতলী, বেতাগী ও পাথরঘাটা পৌর শহরের। নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সকাল থেকে নিম্নাঞ্চলসহ বেড়িবাঁধের বাইরের বসতঘর তলিয়ে যায়। অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে লোকজনকে শুকনা খাবার খেতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন রিংবাঁধের বিষয়ে প্রশাসন গুরুত্ব দিচ্ছে না।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর