শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফের দেড় লাখ টাকায় এনআইডি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ফের দেড় লাখ টাকায় এনআইডি

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে দেওয়া চক্র ফের সক্রিয় হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও এনআইডি তৈরি কর্মসূচিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েই তারা রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি করে দিচ্ছে। একেকটি এনআইডির বিনিময়ে নেওয়া হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনের কর্তকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী, কক্সবাজারের কয়েকজন শিক্ষক ও ব্যবসায়ী। এরই মধ্যে এ চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নতুন করে রোহিঙ্গা এনআইডি চক্রের সক্রিয়তার খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এর আগে রোহিঙ্গা এনআইডি চক্রে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে নতুন করে চক্রটি তৎপর হয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এনআইডির বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। এমন কর্মকান্ডে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়া চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরও রয়েছেন। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ ও এনআইডি তৈরি কর্মসূচি সামনে রেখে সক্রিয় হয় বড় একটি চক্র। এ চক্রে কক্সবাজারভিত্তিক দালাল ছাড়াও ঢাকা সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং নির্বাচন কমিশনের দু-এক জনের নাম তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।’

জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন এনআইডি তৈরির কর্মসূচি হাতে নিলে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে সক্রিয় হয় এনআইডি দেওয়া সিন্ডিকেট। কক্সবাজারের কয়েকজন শিক্ষক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ওই সিন্ডিকেটে নতুন করে যোগ দিয়ে তৎপরতা শুরু করেন। কক্সবাজার এলাকার স্কুলশিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা মিলে বাংলাদেশি এনআইডি পেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কেউ এনআইডি করতে রাজি হলে তারা প্রতি জনের থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা নেন। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গার নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রোহিঙ্গারা পেয়ে যান ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন। এরপর নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কথামতো বিভিন্ন কেন্দ্র গিয়ে লাইনে দাঁড়ান তারা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলে নির্বাচন কমিশনের মূল সার্ভারে তা আপলোড করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা পেয়ে যান এনআইডি। ভোটার হওয়ার এ প্রক্রিয়া শেষ করতে একেকজন রোহিঙ্গাকে খরচ করতে হয় ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের এনআইডি সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের এক সিনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইসি। ওই অভিযোগ তদন্তে নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীরকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান ১৭.০০.০০০০. ০১৫.৫৫.০১০.৯৬ (অংশ).৩২৫ স্মারকমূলে এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন না দেওয়ায় ১২ অক্টোবর শহীদুর রহমান ১৭.০০.০০০০.০১৫.৫৫.০১০.৯৬-৫৫৭ স্মারকমূলে ফের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীরকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর