বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সারে ভর্তুকির চাহিদা ৪৬ হাজার কোটি টাকা

► করোনা মহামারি, যুদ্ধের প্রভাব ডলারের উচ্চ রেট, পরিবহন খরচে দাম বেড়েছে তিন গুণ ► অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সারে ভর্তুকির চাহিদা ৪৬ হাজার কোটি টাকা

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলারের উচ্চ রেট, জাহাজ ভাড়া ও অতিরিক্ত পরিবহন খরচের কারণে আমদানিকৃত সারের দাম বেড়েছে তিন গুণ। এখন সারবাবদ ভর্তুকি বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের জন্য সার বাবদ ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। কৃষি মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের এই খাতে ভর্তুকি লাগবে প্রায় ৪৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এটি বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের তিন গুণের কিছু কম।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, সারে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ও জাহাজ ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য এবং জাহাজ ভাড়া কম-বেশি হলে ভর্তুকির পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে। ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় কৃষি খাতে বরাদ্দকৃত ভর্তুকির অর্থ দিয়ে বিল পরিশোধ সম্ভব হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া এবং পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটে সার বাবদ ভর্তুকি ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বছর শেষে তা ১২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়ায়। মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবার ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকি দিতে গেলে বাজেট শৃঙ্খলা নষ্ট হতে পারে; এক্ষেত্রে ভর্তুকি কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে তখনকার অর্থ সচিব ও বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ বলেছিলেন, জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি সীমা ছাড়ালে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না সরকারের। এরপর জ্বালানি ও ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন ভর্তুকি বাড়লেও সারের দাম বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নাই বলে মনে করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক গতকাল এক অনুষ্ঠানে সারে ভর্তুকির বিষয়ে বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। তাই আপাতত তেলের দাম কমানোর সুযোগ নেই। তবে শুধু কৃষকের স্বার্থে সারের দাম আর বাড়াবে না সরকার। সারের ওপর সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো কৃষির সঙ্গে জড়িত। আয় বাড়িয়ে কৃষকেরা যাতে তাঁদের জীবন মান আরও উন্নত করতে পারেন সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে, সারের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর