সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রংপুর বেনারসি পল্লী

আগের মতো নেই তাঁতের খুটখাট

নজরুল মৃধা, রংপুর

আগের মতো নেই তাঁতের খুটখাট

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বেনারসি পল্লীতে নেই আগের মতো তাঁতের খুটখাট শব্দ। সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠাসহ নানা সমস্যায় এ শিল্পটি হোঁচট খেয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকজন এই ব্যবসাটি কোনোরকমে ধরে রেখেছেন। এক দশক আগে গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রাম বেনারসি তাঁতের খুটখাট শব্দে মুখর থাকত। এখন অনেকটাই নীরব।

স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালের দিকে ১২০-১৩০টি তাঁত দিয়ে ওই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলা হয়। এরপর তালুক হাবু গ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে তাঁত শিল্পের বিস্তৃতি ঘটে। তখন পাঁচশর বেশি তাঁতে ৩-৪ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করতেন। এক দশক আগেও হাবু গ্রামের প্রায় সবাই বেনারসির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁতি পরিবারের  সদস্যরা ছাড়াও কারিগর-শ্রমিকের পদচারণায় মুখর ছিল বেনারসি পল্লী। কিন্তু শ্রমিক সংকট, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, স্থানীয়ভাবে সুতা না পাওয়া, ডাইং মেশিন না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় শিল্পটি হোঁচট খেতে থাকে। অনেক তাঁত শিল্পী ঝরে পড়েছেন। তালুক হাবু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাতেগোনা ৮-১০ জন এই ব্যবসাটিকে কোনোরকমে আগলে রেখেছেন। বেনারসিকে ঘিরে গজঘণ্টা ও বুড়িরহাট এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এখানকার উৎপাদিত শাড়ির ধরন বা নকশার ওপর ভিত্তি করে ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরি রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি নামকরণ করা হয়ে থাকে। একেকটি শাড়ির মূল্য দেড় হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীদের আশা সামনে ঈদ উপলক্ষে এই ব্যবসা ভালো হতে পারে। হাবু গ্রামের তাঁতি আকতারুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তিনি এখনো তাঁতের এই ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। তার চারটি তাঁত রয়েছে।  পরিবারের চারজন সদস্য তাঁতে কাজ করেন। বেনারসি পল্লীর প্রথম উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা তারা পাননি। এ ছাড়া সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ওই এলাকায় ডাইং মেশিন না থাকায় শাড়ি তৈরির পর ডাইং করাতে তাদের ঢাকায় যেতে হয়। এতে খরচ ও সময় দুটোই বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে বেনারসি পল্লীর অনেকেই ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। তিনি ৮-১০টি তাঁত নিয়ে কোনোরকমে ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। বুড়িরহাটের ব্যবসায়ী তাজিদুল ইসলাম বলেন, বেনারসি পল্লী আগের মতো রমরমা নেই। তবে এখানে বেনারসি শাড়ির কয়েকটি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারাই কোনোরকমে বেনারসি  নামটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। বেনারসি শাড়ির উৎপত্তি সম্পর্কে জানা গেছে, এই শিল্পের আবির্ভাব ভারতের বেনারস শহরে। মুসলিম তাঁতিরা বংশপরম্পরায় এই শাড়ি তৈরি করে আসছেন। কিন্তু ঠিক কবে থেকে এর সূচনা হয়েছে জানা না গেলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতের বেনারস থেকে কয়েকটি পরিবার বাংলাদেশে আসে। এরপর এ দেশেও বেনারসি শিল্পের বিকাশ ঘটে। তারা মিরপুর ও পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই বেনারসি শাড়ি তৈরি করতে থাকেন। এরপর  দেশের কয়েকটি স্থানে বেনারসি শিল্প ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর