বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, বসে নেই বিএনপি

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী, বসে নেই বিএনপি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতক্ষীরায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ করে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন আওয়ামী লীগের এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। অনেক প্রার্থী রংবেরঙের লিফলেট ও ফেস্টুন টানিয়ে নিজের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।

রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি, খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির নানা ইস্যুতে জনমত তৈরি করছে বিএনপি। একই সঙ্গে ভোটেরও প্রস্তুতি আছে তাদের। বর্তমানে জেলার চারটি আসনই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দখলে। তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও একটিতে মহাজোটভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টি। তবে এবার আওয়ামী লীগ চারটি আসনই পেতে চায়। আর পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে মরিয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো।

জামায়াতের উর্বরভূূমি হিসেবে খ্যাত সাতক্ষীরা। অতীত সুখস্মৃতি নিয়ে মাঠে আছেন জামায়াত প্রার্থীরাও। প্রতিটি চায়ের স্টল, মাঠ-ঘাট ও হাট-বাজারে একটাই আলোচনা- কোন দলের কে প্রার্থী হচ্ছেন। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, নাকি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে- তা নিয়েও আলোচনা আছে।

সাতক্ষীরা- (তালা-কলারোয়া) : জেলার চারটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের শক্ত ভিত এ আসনটিতেই। কিন্তু বর্তমানে মহাজোটগতভাবে টানা দুবারের এমপি হিসেবে আসনটি আঁকড়ে আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। এবারও তিনি প্রার্থিতার তালিকায় শক্ত অবস্থানে আছেন। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের অর্ধডজন প্রার্র্থীর পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতেরও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবারও মনোনয়ন চাইবেন এ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম।

বিএনপির প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন- সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপি সভাপতি, দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তবে এখন তিনি ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে আছেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী শাহানা আক্তার বকুল প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে দেখা যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ দিদার বখত্। দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, জাতীয় পার্টি মহাজোটভুক্ত থাকলে আসনটি তাদের পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। জাসদ থেকে এখানে মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এবারও নাম শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ।

সাতক্ষীরা- (সদর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের টানা দুবারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুক্তিযুদ্ধের নৌকমান্ডো বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সরব উপস্থিতি এবং শতাধিক উঠান বৈঠকসহ সার্বক্ষণিক নিজ জেলা শহরে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী। এ ছাড়া এ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জেলা সহসভাপতি সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শাফি আহমেদ এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে আছেন কয়েকবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রউফ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে এলাকায় তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি কারাগারে থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে জেলা আমির মুহাদ্দিস আবদুল খালেক সক্রিয় রয়েছেন।

সাতক্ষীরা- (আশাশুনি-দেবহাটা কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত) : এ আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। দলীয় প্রার্থীর তালিকায় তাঁর অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আরও নাম শোনা যাচ্ছে- আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মুস্তাকিম, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি খুলনার উপাচার্য ডা. ইউসুফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম। দলের মধ্যে তাঁর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের তালিকায় আছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন। এ ছাড়া জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রবিউল বাশারের নাম শোনা যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা- (কালীগঞ্জের একাংশ শ্যামনগর) : এ আসনের সংসদ সদস্য শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার। আগামীতেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন- জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে ফজলুল হকের ছেলে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স ম শফি উদ্দোলা লেলিন।

মহাজোটগতভাবে মনোনয়ন পেতে এখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির হুইপ এ এইচ এম গোলাম রেজা। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এখানে কাজ করছেন সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিন ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী। জাসদের প্রার্থী হিসেবে এবারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী দৈনিক ‘দক্ষিণের মশাল’-এর সম্পাদক আশেক-ই-এলাহী।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর