মানুষের ঢলে বিস্তৃত ছিল গতকালের বইমেলা। শাহবাগ থেকে টিএসসি, মৎস্য ভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট আর দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি ও রমনা কালীমন্দিরের গেটসহ সবগুলো প্রবেশ পথেই ছিল ঢল। প্রতিটি প্রবেশ পথে ছিল বইপ্রেমীদের সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ লাইন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে বইমেলায় ফুটে উঠেছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস।
গতকাল ১৭তম দিনে চিরচেনা রূপে ফিরেছিল বাঙালির প্রাণের বইমেলা। এদিন সব ধরনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ছিল আশাব্যঞ্জক। বড়দের বইয়ের চেয়ে শিশুতোষ বই বেশি বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় শুক্রবার ও পঞ্চম ছুটির দিনের মেলায় গতকাল ছিল এবারের মেলার পঞ্চম শিশুপ্রহর। সকাল ১১টায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলার পর টানা দুই ঘণ্টা ছিল শিশুপ্রহর। নির্ধারিত সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকলেও বিকাল পর্যন্ত শিশুপ্রহরে ছিল খুদে পাঠকদের ছোটাছুটি। ভূতের বই, কার্টুনের বই, কমিকস, ঠাকুরমার ঝুলিসহ ভালো লাগার সব বই কিনেই এদিন মেলাপ্রাঙ্গণ ত্যাগ করেছে আগত ছোট্ট সোনামণিরা। এদিন মেলায় নতুন বই আসে ২৭৬টি।
এম মিরাজ হোসেনের চার বই : এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তরুণ লেখক এম মিরাজ হোসেনের চারটি বই। বইগুলো হলো ভ্রমণের বই ‘হাওয়ায় ভেসে হাজার মাইল’, ‘বায়োগ্রাফি’, ‘আপননামা’ম থ্রিলারের বই ‘ব্যাখ্যাতীত’, ও উপন্যাস ‘তবু ফুল ফুটুক’। প্রতিটি বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা নওরোজ কিতাবিস্তান।
আশপাশে মানুষ : এবারের একুশের গ্রন্থমেলায় এসেছে সাংবাদিক তারিক মাহমুদের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘আশপাশের মানুষ’। প্রকাশ করেছে বর্ণ প্রকাশ। চারপাশের বিচিত্র মানুষদের নিয়ে লেখা তারিক মাহমুদের ২১৬ পৃষ্ঠার বাইটির দাম ৩০০ টাকা। বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে বর্ণ প্রকাশের ১৭৫ নম্বর স্টলে।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক-শাখায় প্রথম হয়েছেন আরোহী বর্ণমালা, দ্বিতীয় হয়েছেন অংকিতা সাহা রুদ্র এবং তৃতীয় হয়েছেন জুমানা হোসেন। খ-শাখায় প্রথম হয়েছেন সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছেন আনিশা আমিন এবং তৃতীয় হয়েছেন অদ্রিতা ভদ্র এবং গ-শাখায় প্রথম হয়েছেন আদিবা সুলতানা, দ্বিতীয় হয়েছেন তাজকিয়া তাহরীম শাশা এবং তৃতীয় হয়েছেন সিমরিন শাহিন রূপকথা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, দেওয়ান সাঈদুল হাসান এবং ড. শাহদাৎ হোসেন নিপু। প্রধান অতিথি ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী।
মূল মঞ্চ : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি করেন সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ এবং মো. শওকত আলী। ‘উন্মোচন রহস্য’ নামের নাটক পরিবেশন করে নাটকের দল নাট্যপরিবার এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় সাংস্কৃতিক সংগঠন উদয় দিগঙ্গন।