বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশকে উন্নত পর্যায়ে নিতে হলে বিদ্যমান কোম্পানি আইনের আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাই কোর্ট। ‘মো. উজ্জ্বল বনাম টপটেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেড ও অন্যান্য’ মামলার রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আইনটি সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই রায়ে। এসব পরামর্শের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রায়ের অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।

মামলাটি নিষ্পত্তি করে গত বছর ২৫ আগস্ট রায়টি দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ। ২৩২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিদ্যমান ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪’-এর পর্যালোচনা তুলে ধরে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ‘আইনটি অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। ১৯৯৪ সালে আইনটি সামান্য সংশোধন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৯১৩ সালের আইনটিই রয়ে গেছে। ১০৯ বছরের পুরনো কোম্পানি আইনের কারণে অনাকাক্সিক্ষত কোম্পানি বিরোধের উদ্ভব হচ্ছে। উন্নত দেশ হতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরনো কোম্পানি আইনটির আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য।’

রায়ে আদালত বলেন, ‘প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি মাত্র কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। উন্নত ও যুগোপযোগী কোম্পানি আইনেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে। ভারতে কোম্পানি আইনে ব্যাপক পরিবর্তন করে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হাই কোর্টের ১৪ পরামর্শ হচ্ছে- এক. ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে আইনটি সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন ও আইনটির হালনাগাদ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। দুই. মামলার সংখ্যানুপাতে প্রতি জেলায় এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তিন. প্রতি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। চার. কোম্পানি আইনের অধীনে অপরাধের জন্য বিশেষ ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। পাঁচ. যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদফতরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও পরিদফতরটির আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া। ছয়. ‘করপোরেট ল কোড’ বাংলায় প্রকাশ করে তা প্রতিটি কোম্পানির কার্যালয়ে রাখার ব্যবস্থা করা। সাত. পদ সৃষ্টি করে প্রতিটি কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নেওয়া। আট. প্রতি জেলায় ‘কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। বছরে অন্তত একবার প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তার জন্য সেই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা। নয়. প্রতিটি কোম্পানিতে একজন নিরপেক্ষ পরিচালক, সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা। দশ. পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার বেশি হলে কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করতে পরিপত্র জারি করা। এগারো. কোম্পানির নিবন্ধনে যে শহরের কথা উল্লেখ থাকবে সে শহরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বাধ্যতামূলক করতে পরিপত্র জারি করা। বারো. শেয়ারবাজারসংক্রান্ত আইনের সঙ্গে সংঘাত, এজিএমে অনাহূত পরিস্থিতি এড়ানো ও আয়কর দাখিল সহজ করতে পদক্ষেপ নেওয়া। তেরো. এজিএমে বা অন্য কোনো উপলক্ষে অংশীদারদের উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ দেওয়া নিষিদ্ধ করে এবং এজিএম করতে না পারলে কোম্পানির নিবন্ধন বাতিলের বিধান রেখে বিধি প্রণয়ন করা। চৌদ্দ. আরজেএসসিতে লাভ-ক্ষতি-উদ্বৃত্তের হিসাব, আয়কর বা কর দাখিলের বিধিবিধান করা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর