শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

খালের সীমানা নির্ধারণে জটিলতা

♦ সিএস জরিপ অনুযায়ী ব্যক্তিগত জায়গায় বসছে পিলার ♦ মহানগর জরিপভুক্ত মালিকদের আপত্তি ও অভিযোগ ♦ ডিএনসিসিতে জমা পড়েছে ৩ শতাধিক আবেদন

হাসান ইমন

খালের সীমানা নির্ধারণে জটিলতা

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৬টি খাল হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই খাল উদ্ধার ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন খাল উদ্ধারে সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সিএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা পিলার স্থাপন করায় অনেকের ব্যক্তিগত জায়গায় খুঁটি পড়ছে। জানা গেছে, এতে সীমানা নির্ধারণে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিএস জরিপ সরকার করেছে আর মহানগর জরিপও সরকার করেছে- তাহলে মহানগর জরিপ কেন সিটি করপোরেশন গ্রহণ করবে না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিএস দাগে খাল ছিল। মহানগর জরিপে ব্যক্তিগত জমি হয় কীভাবে? এগুলো ভুয়া কাগজপত্র।

মিরপুর দারুসসালাম মুজিবনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী আবুল হোসেন কাজী গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মেয়র বরাবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন ‘আরএস দাগ নম্বর ৫০৮২ ও ৫০৮৩, যা ক্রয় সূত্রে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে এবং মহানগর জরিপে মালিক হয়ে খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে তিনি ভোগ দখল করে আসছেন। এ অবস্থায় ২০২১ সালে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে জরিপের মাধ্যমে জরিপ পিলার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ সালে উল্লেখিত জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সিএস ও আরএস দাগের অধিকাংশ মালিক বা আগের মালিকরা বহু আগেই জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে জমি খারিজ করা হয়েছে। সিটি জরিপেও মালিক হয়ে খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে।’ আবেদনে আবুল হোসেন কাজী উল্লেখ করেন, তারপরও কেন আমাদের জমির মালিক বলে গণ্য করা হয় না? আমাদের কাগজপত্র থাকার পরও কেন জমি অধিগ্রহণের জন্য কাউকেই কোনো নোটিস প্রদান করা হয়নি কিংবা আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণের জন্য ডাকা হয়নি? শুধু আবুল হোসেনই নয়- এরকম তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসসহ নগর ভবনে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর সত্যতা স্বীকার করে বলছেন, ‘খালের সীমানা নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে’। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড (১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ৫৭ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি) এবং অ্যাডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টকে (সিএসসি) দেওয়া হয়েছে। তারা সিএস জরিপ অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করছে। কিন্তু এখন একটু জটিলতা দেখা দিয়েছে। সিএস জরিপে খালের সীমানা এবং মহানগর জরিপ অনুযায়ী অনেকের ব্যক্তিগত জায়গায় খুঁটি পড়েছে। সে জন্য জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ জটিলতা নিরসনে কাজ করছি।’

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, খালের সীমানা নির্ধারণে পিলার বসানোর প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত, অর্থাৎ ছয় মাস বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড ( ১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ৫৭ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি) এবং অ্যাডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি)। এ প্রকল্পের অধীনে উত্তর সিটির ২৯টি খালের সীমানায় পিলার বসানো হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ড্রোন সার্ভে সিএস/আরএস/এমএস মৌজা ম্যাপ ও অর্থোফটো, পিলারের জিআইএস ডাটাবেস প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৯১০টি পিলারের মধ্যে ৪০০টি বসানো হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল পয়েন্ট (জিসিপিএস) ও ড্রোন সার্ভে স্থাপন, জিসিপিএস ব্যবহার করে অর্থোফটোর প্রস্তুতি, জিসিপি ব্যবহার করে সব মৌজা ম্যাপ শিটের সারিবদ্ধ করা, জিআইএস ডাটাবেস প্রস্তুত, ডাটাবেসে ভার্চুয়াল পিলার পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করা, পিলার পয়েন্ট মাটিতে চিহ্নিতকরণ ও পিলার নির্মাণ, অবৈধ দখলদার শনাক্ত, দূষণের উৎস খুঁজে বের করা, জিআইএস ডাটাবেস ও আর্কজিআইএস এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওয়েবপোর্টাল তৈরির কাজ চলছে।

রাজধানীর খাল নিয়ে একাধিক গবেষণা করা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএস জরিপে খাল ছিল। আর মহানগর জরিপ করা হয়েছে দখল সূত্র বিবেচনা করে। সুতরাং যারা অভিযোগ করছে তারা দখল সূত্রে। যেখানে সিএস জরিপে খাল, সেখানে মহানগর জরিপে ব্যক্তিগত জমি আসবে কোথা থেকে? এগুলো ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে করা, এসবের কোনো মূল্য নেই।’

 

সর্বশেষ খবর