সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুঘল আমলের আরিফাইল শাহি জামে মসজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

মুঘল আমলের আরিফাইল শাহি জামে মসজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনন্য নিদর্শন মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ‘আরিফাইল শাহি জামে মসজিদ’। ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার আরিফাইল গ্রামে নির্মিত হয় মসজিদটি।

প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো। ছাদের ওপরে থাকা গম্বুজ এবং এর কারুকার্য জানান দিচ্ছে মুঘল উৎকর্ষতার। বাংলাদেশের অনন্য  এ স্থাপত্যটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের তালিকাভুক্তও হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের অধীন হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। স্থানীয়দেরই এর দেখভাল করতে হয়। সেই সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দর্শনার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, দরবেশ শাহ আরিফ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং তাঁর নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩৬১ বছর আগে নির্মিত আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার দূরবর্তী আরিফাইল গ্রামের সাগরদীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত মসজিদটির আয়তন লম্বায় ৮০ ফুট ও প্রস্থে ৩০ ফুট। মসজিদের চার কোনায় চারটি বুরুজ ও মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোর নিচে মসজিদের ভিতরে তিনটি রয়েছে যা ভিতরের অংশকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। গম্বুজগুলোতে পদ্মফুল অঙ্কিত রয়েছে। মসজিদটির ছাদ তিনটি বড় গম্বুজ দ্বারা আবৃত। চুন, সুরকি আর ইটের গাঁথুনির সঙ্গে মসজিদের ভিতরে ও বাইরের অপরূপ কারুকার্য এর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মূল গেট থেকে কারুকার্য শুরু করে মসজিদের ভিতরেও বিভিন্ন অংশ কারুকার্য জানান দিচ্ছে মুঘল আমলের উৎকর্ষতার। মসজিদটির প্রবেশপথ ৫টি, যার তিনটি হলো পূর্বদিকে এবং বাকি দুটি যথাক্রমে উত্তর ও পূর্বদিকে।

মসজিদটির উত্তর পাশেই রয়েছে বিশাল আয়তনের একটি দীঘি, যার একটির নাম সাগরদীঘি। জনশ্রুতি আছে, সাগরদীঘি থেকে পানি পান করে আগত ব্যক্তিরা রোগমুক্ত হতেন। এ ছাড়াও মসজিদটির দক্ষিণে রয়েছে দুটি কবর, যা ‘জোড়া কবর’ বা ‘রহস্যময় কবর’ নামে পরিচিত। কবর দুটিতেও মুঘল স্থাপত্যকলা ও অপূর্ব নির্মাণশৈলীর প্রভাব বিদ্যমান। মসজিদের পাশে অবস্থিত জোড়া কবর নিয়ে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি ও কল্পকাহিনি। তবে সে সময় এগুলো কার মাজার ছিল তার প্রকৃত তথ্য এখনো অনাবিষ্কৃত। প্রতিদিন এই মাজারে লোকজন এসে নামাজ আদায় করে বিভিন্ন মানত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শের আলম বলেন, শত শত বছর ধরে মসজিদটি টিকে আছে ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে। ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। তবে এখানে আসার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সরু হওয়ায় দর্শনার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রাস্তাটি প্রশস্ত করলে দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধা হবে।

আরিফাইল মসজিদের খতিব নজরুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই মসজিদে আজান ও ইমামতি করছি। প্রতিদিনই এটিকে পরিষ্কার করে রাখছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসেন ও টাকা পয়সা দান করেন। এলাকাবাসী ও পর্যটকদের টাকায় মসজিদটি চলছে।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, সরাইল একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। প্রায় ৩ শতাধিক বছরের পুরনো আরিফাইল মসজিদ। এটি দেখার জন্য অনেক পর্যটক আসেন। সড়কটি যেহেতু সংকীর্ণ, কীভাবে প্রশস্ত করা যায়- সে বিষয় আমরা দেখব।

যেভাবে যাওয়া যায় : বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে নেমে সিএনজি অটোরিকশায় করে ২০ মিনিট গেলেই সরাসরি মসজিদে যাওয়া যায়। সরাইল উপজেলা চত্বরের মূল ফটক থেকে রিকশাযোগে কিংবা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়।

 

সর্বশেষ খবর