শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছোট ফেনী নদীতে নির্মাণ বহুতল ভবন!

ফেনী প্রতিনিধি

ছোট ফেনী নদীতে নির্মাণ বহুতল ভবন!

ফেনীর জায়লস্করে বারাহিগোবিন্দ গ্রামে ছোট ফেনী নদী দখল করে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন। এতে বর্ষার সময় দুই ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহিগোবিন্দ মৌজার জে.এল নম্বর-৫৪, ২৬৫৩ খতিয়ানে ৬০ শতাংশ ও ২৬৫২ দাগে ৯০ শতাংশ জমি সিরাজুল হক হাঁস-মুরগি পালনের জন্য লিজ (বন্দোবস্ত) নেন। পরবর্তীতে হাল জরিপ চলাকালীন ভূমি অফিসের যোগসাজশে ২৬৫৩ দাগের ৬০ শতাংশের পরিবর্তে মূল নদীর বিভিন্ন দাগে ১০৩ শতাংশ ভূমি তার নিজের নামে করে নেন। যে অংশটি তিনি নতুন করে নিজের নামে করে নেন তার সম্পূর্ণই নদীর অংশ। সে অংশটি পানি প্রবাহের মূল স্রোতধারা। স্থানীয়রা জানান, সরকারের কাছ থেকে নদীর পাশের কিছু অংশ ইজারা নেওয়ার সময় সেখানে হাঁসের খামার করার কথা থাকলেও বর্তমানে               সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। প্রবহমান ছোট ফেনী নদীর পাশের পতিত জমিটি হাঁস-মুরগি পালনের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও বর্তমানে পুরো নদীই দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় বেলায়েত হোসেন জানান, সিরাজুল হকের ইজারা নেওয়া ভূমির নথির সঙ্গে দখল করা ভূমির কোনো মিল নেই। তিনি ৪৬৭ দাগে ২৫ শতাংশ, ১৫ দাগে ১৬ শতাংশ, ১৪ দাগে ৫১ শতাংশ ও ১০৫২ দাগে ১০ শতাংশ ভূমি দখল করে নিয়েছেন। এ দাগগুলো সম্পূর্ণ নদীর পানি প্রবাহের জায়গা। গত কিছুদিন আগে থেকে তিনি পুরো নদী দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। কিছুদিন আগেও এখানে একটি কালভার্ট ছিল। নদীর পানি এ কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবহমান থাকায় স্থানীয়রা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করত। কিন্তু গেল বছর সিরাজুল হক বালুর বস্তা দিয়ে কালভার্টটি ভরাট করে ফেলেন। এতে নদীর পানি প্রবাহের জায়গা না পেয়ে লোকালয়ে উঠে পড়ছে। স্থানীয় নুরুল আমিন, আবদুর রশিদ, মো. শাহজাহান, আবদুল খালেক ও ফারুক জানান, এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তারা ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তারা ছোট ফেনীর নদীর স্রোতধারার মাঝখানে সিরাজুল হকের বহুতল ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, গত বছর পর্যন্ত বিজিবি ক্যাম্পের পানি ও স্থানীয় লোকালয়ের পানি এ ছোট ফেনী নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে হচ্ছে না। নদী ভরাট করে ফেলায় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। মানুষের ঘর-বাড়িতেও পানি উঠে যাচ্ছে। এ নদীর পানি ব্যবহার করে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন ও দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বাসিন্দারা চাষাবাদ করতেন। নদীর কালভার্টের মুখে বালুর বস্তা দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা জানান, সিরাজুল হকের দেখাদেখি নদীর পাশের অন্যরাও নদী দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

স্থানীয় মো. শাহজাহান জানান, নদীর পাশে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুরে তার পাঁচটি মাছের খামার রয়েছে। বর্ষাকালে লোকালয়ের পানি নদীতে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় তার মাছের খামারগুলো পানিতে ভেসে যাওয়ার শতভাগ আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া সেখানে তার পারিবারিক ৫ একর জমি আছে। নদীর মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ওবায়েদ মিস্ত্রি বাড়ির আবুল হোসেন জানান, আগে যখন নদীটির কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছিল তখনো নদীর পানি ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পারায়, তার বাড়িতে পানি উঠে যায়। বর্তমানে নদীটির পানি চলাচলের মুখ পুরোদমে বন্ধ করে দেওয়ায় এ বর্ষায় তার পুরো বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক জানান, নদীতে কিছুদিন আগেও পানির প্রচুর প্রবাহ ছিল। এখানকার মানুষরা নদীর পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করত। বর্তমানে নদীটি বন্ধ করে দেওয়ায় চাষাবাদ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামকে গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে সিরাজুল হক বলেন, ভূমিটি আমার লিজ নেওয়া। বিএস খতিয়ানে জমিটি আমার ও আমার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে করা আছে। জায়লাস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, স্থানীয়রা তার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত। নদীটি উদ্ধার করা সময়ের দাবি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। সিরাজুল হককে ইজারা নেওয়া জমির বাইরে গৃহ নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, ছোট ফেনী নদীর এ অংশটি এক ব্যক্তি দখল করে রেখেছেন ঘটনাটি সত্য। এটি দখলমুক্ত করে ছোট ফেনী নদী রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এখনই প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, নদীটি আমরা কাউকে ইজারা দিইনি। উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে কি না জানা নেই। সরেজমিনে পরিদর্শনে যাব।

সর্বশেষ খবর