বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ মাঠে, প্রস্তুতি বিএনপিতেও

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

আওয়ামী লীগ মাঠে, প্রস্তুতি বিএনপিতেও

নোয়াখালী জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৯ মাস বাকি। তবু নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা সভা-সমাবেশ ও ইফতার মাহফিল ইত্যাদি নানান তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজপথ দখলে রেখে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, দেশের উন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য দেখে জনগণ তাদের দলকে আবার ক্ষমতায় বসাবে। এদিকে বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ-উদ্দীপনা তেমন না দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে কর্মিসভা, ইফতার পার্টিতে যোগদান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের পাশাপাশি প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

নোয়াখালী- (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম (আওয়ামী লীগ) পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন, করোনাকালে ও বর্তমানে অসহায় দুঃখীদের মধ্যে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ ছাড়া বাড়িঘর নির্মাণে গরিব অসহায়দের অনেক সহায়তা করায় তার সুনাম রয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দলকে করেছেন সুসংগঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পছন্দের প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন এইচ এম ইব্রাহিম। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, চাটখিল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন জিটু, সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিনের নামেও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক দুবারের এমপি অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন কামরান, সাবেক এমপি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নামও শোনা যায়।

নোয়াখালী- (সেনবাগ-আংশিক সোনাইমুড়ী) : এ আসনে সংসদ সদস্য শিল্পপতি মোরশেদ আলম (আওয়ামী লীগ)। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি লড়বেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি, নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও শিল্পপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেনবাগ-সোনাইমুড়ীতে দলীয় নেতা-কর্মীসহ গরিব অসহায়দের সহায়তা করে আসছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা অর্থনীবিদ ড. জামাল উদ্দিনও মনোনয়ন চাইবেন। একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা হাসান মঞ্জুর ইদানীং এ আসন এলাকায় নানা রকম গণমুখী কাজ করছেন। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এবং সেনবাগ উপজেলা জাপার সভাপতি। হাসান মঞ্জুরও প্রার্থী হওয়ার জোর গুঞ্জন চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক চিফ হুইপ খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক এমপি জয়নুল আবদীন ফারুক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানও দলীয় প্রার্থী।

নোয়াখালী- (বেগমগঞ্জ) : জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র বেগমগঞ্জ আসনে সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ (আওয়ামী লীগ) আবারও প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শিল্পপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ বি এম জাফর উল্লার নামও আলোচিত হচ্ছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লা বুলু হতে পারেন শক্ত প্রার্থী।

নোয়াখালী- (সদর-সুবর্ণচর) : জেলা সদর এ আসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আসনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ)। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতে, এ আসনে একরামুল করিম চৌধুরীর বিকল্প দৃশ্যত কেউ নেই। দুঃসময়ে দলের হাল ধরে দলকে সুসংগঠিত করার কারণে তার ইমেজ ভালো। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি এ আসনে তিনবার নির্বাচিত। তার এমপি হওয়ার আগে এ আসনটি দীর্ঘ ২১ বছর বিএনপির হাতে ছিল। তিনিই আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগের দখলে নিয়েছেন। সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি ও ব্যক্তিগতভাবেও দুস্থজনকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেন বলে নগদ চৌধুরী বলা হয় তাকে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মোহাম্মদ শাহজাহান এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন। তিনিও দলীয় সভা-সমাবেশ ও ইফতার পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠুও প্রার্থী হচ্ছেন। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছেন।

নোয়াখালী- (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে এ আসন থেকে বারবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। নিজ এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়নও করেছেন। সংগঠিত করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ আসনে ওবায়দুল কাদেরের প্রার্থিতা সুনিশ্চিত। অন্যদিকে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য উপজেলা বিএনপির সদস্য হাসনা মওদুদ। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে।

নোয়াখালী- (হাতিয়া) : এ আসনে সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস (আওয়ামী লীগ)। এবারও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমীর প্রার্থী হচ্ছেন। তিনিও দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রকৌশলী ফজলুল আজিম বিএনপির প্রার্থী হবেন বলে শোনা যায়। আগেও তিনি এমপি ছিলেন। তিনিও দীর্ঘদিন জনসেবায় নিবেদিত রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর