মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুর্নীতিবাজ ধরতে ফের ফাঁদ পাতা কৌশলে দুদক

আনিস রহমান

দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন নতুন কৌশলে চাঙা হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চেষ্টা চলছে সংস্থার নিষ্ক্রিয় কর্মসূচিগুলোকে ফের সক্রিয় করার। এরই অংশ হিসেবে দুর্নীতিবাজদের ধরতে ফাঁদ পাতা কর্মসূচি আবারও শুরু করেছে দুদক। শুধু ফাঁদ পাতা কৌশল নয়, দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচিও আবার বিস্তৃত পরিসরে শুরু করা হয়েছে। সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কর্মকর্তারা মনে করেন, হাতেনাতে দুর্নীতি ধরার বেশ কার্যকর একটি কৌশল হচ্ছে ফাঁদ মামলা। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে ফাঁদ মামলার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমেছিল। দুদকের তৈরি করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ফাঁদ মামলার তদন্ত হয় চারটি। আগের বছর হয়েছিল ছয়টি। তার আগে ২০১৮ সালে ১৫টি, ২০১৯ সালে ১৬টি ও ২০২০ সালে ১৮টি ফাঁদ মামলা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের ফাঁদ কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালে। ওই বছরই এটি দুদকের ১৬ নম্বর বিধিতে সংযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্তে আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে হাতেনাতে ধরার উদ্দেশে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনারের অনুমোদনক্রমে তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফাঁদ মামলা (ট্র্যাপ কেস) প্রস্তুত করতে বা পরিচালনা করতে পারবেন।’

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ১৭ ধারা অনুসারে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর আওতায় জনগণকে সচেতন করা, দুর্নীতির খারাপ দিকগুলো তুলে ধরা এবং সততা সংঘ গঠন এবং বিক্রেতাবিহীন সততা স্টোর পরিচালনা করা হয়। এই প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা কার্যক্রম একজন মহাপরিচালকের অধীনে দুজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক ও কয়েকজন সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালকের অধীনে সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে সারা দেশে ৫০২টি প্রতিরোধ কমিটি ও ২০ হাজার ৮৮৫টি সততা সংঘ গঠন করা হয়েছে। সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে এক হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে। এর উদ্দেশ্য সরকারি ও বেসরকারি অফিসে দুর্নীতি কমিয়ে আনা। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি চাকরিজীবী ও জনসচেতনতাকে দুর্নীতির কারণ ও কুফল সম্পর্কে সচেতনতা করা সরকারি চাকরিজীবীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করা। দুর্নীতির দায়ে জেল জরিমানা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং সরকারি পেনশনসহ সরকার থেকে পাওয়া অর্থিক সুবিধা হারানো শাস্তির খবর প্রচার করা। এসব কর্মসূচির পাশাপাশি দুদক এনফোর্সমেন্ট অভিযানকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিগত বছরে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে ৪৫৬টি অভিযান পরিচালনা করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। সব মিলিয়ে এক বছরে ২ হাজার ৫৫০টি এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করে এই ইউনিট। এসব অভিযান শেষে জরিমানা, কারাদণ্ড, ঘুষের টাকা উদ্ধারসহ নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় সরকার ও নাগরিক সেবা, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, বন ও পরিবেশ, প্রকৌশল, কৃষি ও অর্থসহ বিভিন্ন সেক্টরে অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুদকের সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের আরও ১৪টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে মোট ৩৬ জেলায় সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে সংকোচিত হয়ে পড়া দাফতরিক কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে শুরু হওয়ায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। জেলা ও থানা পর্যায়ে সিভিল সোসাইটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী, এনজিও কর্মীসহ স্বনামধন্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১৩ সদস্যের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। তারা মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, মানববন্ধন র‌্যালি ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এর বাইরে গণশুনানি, স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার জন্য সততা সংঘ গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে সরকারি রাষ্ট্রীয় দফতর সংস্থা বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি দমনে নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর