গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দিনরাত ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনকে সাজাতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড, অলিগলি, সড়ক-মহাসড়কের পাশ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আজমত উল্লা খান টঙ্গীতে গণসংযোগ করেছেন। পরে স্থানীয় একটি কনভেনশন সেন্টারে গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। অন্যদিকে মাকে নিয়ে প্রচারণা চালান সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
আজমত উল্লা খান বলেন, টঙ্গী পৌরসভায় আমি দায়িত্ব পালনকালে সেখানে কোনো দিনই কোনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। সুতরাং এ দুর্নীতিটা রোধ করার যে পদ্ধতি সে পদ্ধতি অবলম্বন করেই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে, জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তুলে এবং জনগণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে কীভাবে দুর্নীতি রোধ করা যায় সে পদ্ধতিটাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে করা হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সম্পর্কে তিনি বলেন. ‘আমি সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি, কাউকে ছোট করে দেখতে চাই না, কাউকে বড় করতে চাই না।’ সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন কাশিমপুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন গণসংযোগ করেন শহরের হাবিবউল্লাহ সরণি এলাকায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ-নুর ইসলাম রনি গণসংযোগ করেন কোনাবাড়ী, টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার সফিউদ্দিন রোড, মোল্লাবাড়ী রোড, খাঁপাড়া রোড, সাতাইশ রোড এলাকায়। হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান পূবাইল থানার ২৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমি লড়াই করছি জনগণের জন্য। আমার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের জনগণ রয়েছে। আমি আমার ও ভোটের নিরাপত্তা চাই। সুষ্ঠু ভোট চাই। আমি নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটা সুষ্ঠু ভোট চাই।’ তিনি আরও বলেন, আমি শুধু জাহাঙ্গীর আলমেরই মা নই, নগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে জাহাঙ্গীর আলম রয়েছে, সে হিসেবে আমি সবার মা। ওরা সবাই আমার পক্ষে কাজ করবে। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সমর্থন করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ইনশা আল্লাহ বিজয় অবশ্যই আমার হবে। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শাহ-নুর ইসলাম রনি প্রচারণাকালে বলেন, মানুষের কাছ থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ নতুন কিছু চায়। দিন দিন জনসমর্থন বাড়ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, আমাকে বিজয়ী করলে ইনশা আল্লাহ জলাবদ্ধতা, মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংমুক্ত বসবাস উপযোগী করে নগরী গড়ে তুলব। মেয়র প্রার্থী গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহম্মেদ ও স্বতন্ত্র মো. হারুন অর রশিদও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
রম্যরসের প্রচারণা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নগরজুড়ে চলছে রম্যরসের প্রচারণা। কখনো গান গেয়ে কখনো অভিনয়ের সুরে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন কর্মীরা। ভোটাররা কাজ রেখে শুনছেন প্রচারণার গান।৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হাসান। তার প্রতীক ঝুড়ি। তিনি ঝুড়িভর্তি আম নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপির হাতে তুলে দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। আরেক প্রার্থী নিজ প্রতীক টিফিন-ক্যারিয়ারে করে শুকনো খাবার দিয়ে ভোট চাইছেন। ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার মার্কা আনারস। তাই সবাইকে আমার মার্কা মনে রাখার জন্য আনারস খাওয়াব।’ ভোট পেতে বিভিন্ন কৌশলে হাঁটছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আহসান উল্লাহ, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে আজমেরী খান টুটুল, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম দিপু, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল হোসেন, এম এম নাসির উদ্দিন, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইঞ্জিনিয়ার এম এম হেলাল উদ্দিন প্রচারণা চালান। তারা সন্ত্রাস, মাদক নির্মূল এবং স্মার্ট ওয়ার্ড গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।