অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জে অস্ত্রসহ ৩ শতাধিক সর্বহারা ও চরমপন্থি দলের নেতা ও সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় অবস্থিত র্যাব-১২ সদর দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আশির দশক থেকে সিরাজগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম কয়েকটি জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকায় সর্বহারা ও চরমপন্থিরা ঘাঁটি তৈরি করে। পরে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘সন্ত্রাসের জীবন ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ স্লোগানে সর্বহারা-চরমপন্থিরা আলোর পথে ফিরে আসেন। এ অঞ্চলেও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে শতাধিক সর্বহারা-চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তখন যেমন সবাইকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তেমনি আজকেও যারা আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরে আসছেন তাদের আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে সার্বিক ও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পর্যালোচনা করে আইনি পদক্ষেপসহ দায়মুক্ত করা হবে।
পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), লাল পাতা ও সর্বহারাসহ বেশ কয়েকটি চরমপন্থি দলের ৩১৫ সদস্যের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন আমরা দুর্গম এলাকায় বসে থাকব, অপরাধ করব আর আপনারা ধরতে পারবেন না, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। র্যাবকে সর্বোচ্চ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। র্যাব যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে মুহূর্তে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘র্যাব নানাবিধ ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তারা জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এ জন্যই চরমপন্থিরা আত্মসমর্পণের জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। র্যাব আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নানা মানবিক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।
সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার চরমপন্থি নেতা ও সদস্যদের অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরাতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি র্যাবকে ধন্যবাদ জানান।
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাব-১২ অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. আবদুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
