বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ধনাঢ্য ১০ প্রেমিকা

আলী আজম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহা। চাকরির সুবাদে রাজউকে সেবা নিতে যাওয়া বিত্তশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন তিনি। পরে পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রজেক্টে প্লট পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক আরও গভীর করতেন। তিনি পরিচিত নানাজনের বাসাবাড়িতে যাতায়াতের সুবাধে বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। বিত্তশালী এবং অভিভাবকহীন নারীদের সরলতার সুযোগে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন। এভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন রাজউক কর্মচারী দেবাশীষ। শুধু নারী নয়, অনেক বিত্তশালীকেও ফাঁদে ফেলতেন তিনি। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে হুমকিও দিতেন। গতকাল রাতে রাজধানীর রামপুরা থেকে দেবাশীষকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার কাছ থেকে টয়োটা নোহা মডেলের (ঢাকা মেট্রো-চ ১৯-৯৭৫২) গাড়ির ফিটনেস সনদ ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। ডিবি বলছে, ১০ জনেরও বেশি নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দেবাশীষের। সবার কাছ থেকেই তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ডিবি সূত্র জানায়, রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা সুলতানা (ছদ্মনাম) নামে এক নারী রাজউক কর্মচারী দেবাশীষের মাধ্যমে সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ওই নারীর সমস্যা এবং সরলতার সুযোগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন দেবাশীষ। বাবা মারা যাওয়ার পর জমি-জমা ও প্লট সংক্রান্ত কাজে দেবাশীষের সঙ্গে ওই নারীর আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের বিভিন্ন সময় ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন দেবাশীষ। এর মধ্যে রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে প্লট দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই নারীর দুটি ফ্ল্যাট বিক্রয় করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ওই নারীর কাছে থাকা ১৫০ ভরি স্বর্ণ বিক্রয় করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, একটি প্লট বিক্রি করে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করে ৫০ লাখ টাকা, এলিয়ন প্রাইভেটকার গাড়ি বিক্রয় করে ১০ লাখ টাকা নেন। পরে মন্দিরের প্লট পূর্বাচলে বরাদ্দ করে দেওয়ার প্রলোভনে ৫০ লাখ টাকা, ওই নারীর আরেক বন্ধুকে প্লট দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ঝিলমিল প্রজেক্টে তার নিজের নামে প্লট আছে জানিয়ে সেটি বিক্রির নামে আরেকজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। একইভাবে ওই নারী ও তার বন্ধু এবং অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোট ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আরও কয়েকজন নারীকে ফাঁদে ফেলে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, একটি প্রতারণা মামলার সূত্র ধরে রাজউকের ওই কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দেবাশীষ। আমরা তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করছি।

সর্বশেষ খবর