কাল জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা। কাল শতাধিক নাগরিককে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবে নির্বাচন কমিশন। উদ্যোগ নেওয়ার সাড়ে তিন বছর পর আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রথমবারের মতো এনআইডি সেবা পাচ্ছেন। ফলে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। সফলতা পাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে ইসির এনআইডি তুলে দেওয়ার উদ্যোগ। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর পর্যায়ক্রমে প্রবাসে অন্যান্য দেশে এনআইডি সেবা দ্রুত চালুর প্রক্রিয়া চলবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এর ফলে দেশের বাইরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। ভবিষ্যতে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ কাজের বিস্তৃতি ঘটবে। তিনি জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে চান। এনআইডি না থাকায় অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠান। এখন এনআইডি পেলে হুন্ডির পথ ছেড়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে; যা দেশের রিজার্ভ বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এ সেবা মোবাইল ব্যাংকিসহ নাগরিকদের নানা ধরনের কাজেও লাগবে। তিনি বলেন, ‘ইসির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে এনআইডি তুলে দেওয়ার উদ্যোগ সফল হচ্ছে। এতে সম্মানিত প্রবাসীদের নানা প্রকার নাগরিক সেবা গ্রহণসহ রেমিট্যান্স পাঠানো যেমন সহজতর হবে, তেমনিই দেশও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
কাল সোমবার নির্বাচন কমিশনার, রাষ্ট্রদূত, কনসাল জেনারেলের উপস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়ত্র প্রদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিবন্ধনকৃত শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিকে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। এ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খানের নেতৃত্বে ইসি সচিবালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের একটি টিম সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়ত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসে ইসির নিজস্ব টিমের (কারিগরি ও প্রশাসনিক) সহযোগিতায় দূতাবাসসংশ্লিষ্ট জনবলকে এ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হয়। এরপর জুনে আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়।
আমিরাতের পর এক বছরের মধ্যে ১৫ দেশে চালুর আশা : ১৫ বছর আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরুর সময় থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটার করা ও এনআইডি দেওয়ার দাবি করছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এরপর করোনা মহামারিতে সে উদ্যোগ থমকে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নেয়। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মালদ্বীপে ৫ হাজারের বেশি নাগরিক আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর পর্যায়ক্রমে প্রবাসে অন্যান্য দেশে এনআইডি সেবা দ্রুত চালুর প্রক্রিয়া চলবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফলভাবে পরীক্ষামূলক কাজটির পর আগামী এক বছরে অন্তত ১৫টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সেবা শুরুর প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। এর মধ্যে বেশি রেমিট্যান্স আসে এমন দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’ তিনি জানান, প্রবাসে তো ল্যামিনেটেড এনআইডি দেওয়া হবে। কারণ স্মার্ট কার্ড ছাপানো হবে দেশে। প্রবাসী যখন দেশে ফিরবেন তখন স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ধীরে ধীরে ৪০টি দেশে এ সেবা চালুর পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে বিশ্বে ১৭৬টি দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত রয়েছেন।