প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে ১৬৭ দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়েছেন নাজমুন নাহার। ১৬৭তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন সেন্ট লুসিয়া। দীর্ঘ এ যাত্রাপথে দেশে দেশে প্রচার করেছেন শান্তির বার্তা। সেন্ট লুসিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ জোসেফ পিয়ের এক বিশেষ সাক্ষাতে নাজমুন নাহারকে ১৬৭ দেশে বিশ্বশান্তির বার্তা ও লাল-সবুজের পতাকা বহনের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দিত করার পাশাপাশি ‘সুপার ব্রেভ গার্ল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সেন্ট লুসিয়ার লিডিং নিউজ পেপার ‘দ্য ভয়েস’ নাজমুন নাহারের বিশ্ব ভ্রমণ নিয়ে প্রকাশ করেছে এক বিশেষ ফিচার স্টোরি। খ্যাতনামা সাংবাদিক মার্বেলা অ্যান্থনির লেখায় উঠে আসে নাজমুন নাহারের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও বিশ্ব অভিযাত্রার কঠিন চ্যালেঞ্জের কথা। ২২ বছর ধরে নাজমুন পৃথিবীর এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরেছেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণœ রেখে গৌরবের সঙ্গে মাতৃভূমিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে!
চলতি বছরের মে মাসে নাজমুন নাহার এবারের অভিযাত্রা শুরু করেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনাম ও গায়ানা থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ত্রিনিদাদ টোবাগো, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাইড, বার্বাডোজ ও সেন্ট লুসিয়া পর্যন্ত। বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভ্রমণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নাজমুন নাহার। ২০০০ সালে ভারতের ভূপালের পাঁচমারীতে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তার বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক অর্জন করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপর। ১৫০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক অর্জন করেন আফ্রিকা মহাদেশের দেশ সাওতমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ পৌঁছে। বিশ্ব ভ্রমণের পাশাপাশি নাজমুন নাহার পরিবেশ রক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে সারা পৃথিবীতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে চলেছেন। ভ্রমণের সময় ‘নো ওয়ার অনলি পিস’, ‘সেভ দ্য প্লানেট’ এই শান্তি ও ঐক্যের বার্তাগুলো পৌঁছান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু ও তরুণদের উৎসাহিত করেন। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ নাজমুন সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২২ বছরের বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। বহুবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন। তবে থেমে যাননি। লাল-সবুজের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রতিটা দেশ ভ্রমণ তার লক্ষ্য। প্রায় দুই যুগের এই ভ্রমণ অভিযানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিদের থেকে সংবর্ধিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছেন পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মাননা ‘পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড’। দেশে-বিদেশে ৫০টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি। নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে জন্ম নিয়েছেন এই আলোকিত নারী।
