সিলেটে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘১১তম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ডায়ালগ’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে উভয় দেশকে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশের বক্তারা। এ সংলাপ উভয় দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদারে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন দুই দেশের অতিথিরা।
গতকাল বিকাল ৪টায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে আয়োজিত এ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ভারতের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন্ট পালা, সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্তা, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আরেফিন।
‘একটি ব্যাপক ও পারস্পরিক উপকারী অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। তাই পারস্পরিক ভাগ্যোন্নয়নে উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার সুযোগ এবং পি২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিট আয়োজনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের সংসদ এবং নারী আইনপ্রণেতাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৪৬০ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছে ভারতে, যা ভারতের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার বক্তৃতায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, উন্নত যোগাযোগ, জ্বালানি খাতে উপআঞ্চলিক সহযোগিতা, পানি বন্টন সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও জোরদার করার তাগিদ দেন।
সংলাপে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্তা দুই দেশের চমৎকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই পক্ষের মধ্যে নানা উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি না দিয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। ভারতের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন্ট পালা বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধু দুই দেশের সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ সম্পর্ক দুই দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের মধ্যকার আন্তরিকতা পর্যন্ত ব্যাপৃত।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও প্রতিরক্ষা জোরদারের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশকে খুব কাছের বন্ধু মনে করে। যার প্রমাণ জি২০ সম্মেলনে ভারত বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় এবং সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন। আজ সংলাপের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে ছয়জন মন্ত্রী, ২০ জন সংসদ সদস্য ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। আর সংলাপে অংশ নিতে ভারত থেকে এসেছে ১৪০ জনের প্রতিনিধি দল।