ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বেহাইর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বীজতলা থেকে উৎপাদন হচ্ছে নানা জাতের শীতকালীন সবজির চারা। আর্থিক সচ্ছলতা ও সবজির চাহিদা মেটাতে প্রতি বছরের ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। চারার গুণগত মান ও ফলন ভালো হওয়ায় এর চাহিদা ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চলতি শীত মৌসুমকে ঘিরে সদর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৪০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রুকলি, টম্যাটো, বেগুন, লাউ, মরিচসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের বীজতলা থেকে চারা করা হয়েছে। গুণগত মান ও ফলন ভালো হওয়ায় জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে সবজির আবাদ করে থাকেন। চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, প্রকার ভেদে টম্যাটোর ১ হাজার পিস চারা ১৮ শ থেকে ২ হাজার টাকা, ফুলকপির ১ হাজার চারা ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা, মরিচ ১ হাজার চারা আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, বেগুন ১ হাজার চারা ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, বাঁধাকপির ১ হাজার চারা ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, লাউয়ের ১ হাজার চারা ২০ হাজার টাকা, ব্রুকলি ১ হাজার চারা ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় চারার বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কমেছে লাভের পরিমাণ। তাদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রসার ঘটবে সম্ভাবনাময় এই কৃষি পেশার।
কৃষক সেণ্টু ভৌমিক বলেন, আমাদের চারার গুণগতমান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা সবসময় আমাদের কাছ থেকে চারা কেনেন। চারার বীজের দামও অনেক বাড়তি। আমরা আগে টম্যাটোর বীজ কিনতাম ৪০০ টাকা দরে, এখন কিনতে হয় ৯০০ টাকা দিয়ে। ফলে আমাদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন লাভ কম হয়। সরকার যদি বীজের দাম কিছুটা কমিয়ে দেয় তাহলে আমরা লাভবান হব। অপর কৃষক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, আমরা শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করি। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, মরিচ, লাফা বেগুনসহ আরও কয়েক ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করে থাকি। এই সবজির চারা উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের অনেক শ্রম দিতে হয়। পাশাপাশি এখন বীজের দামও অনেক বেশি। যদি সরকারিভাবে আমাদের সহযোগিতা করে ও বীজের দাম কমিয়ে দেয় তাহলে আমরা আরও লাভবান হব।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বেহাইর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার সবজির চারা উৎপাদনে জড়িত। এই গ্রাম ছাড়াও আরও অন্যান্য কয়েক গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন কৃষকরা। প্রতি মৌসুমে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি চারা ক্রয়বিক্রয় করা হয় এই উপজেলায়। চারা উৎপাদনের প্রসার ও দক্ষতা বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণের পাশাপাশি কৃষকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।